বিক্ষোভ: দুর্গতদের সামনে হম্বিতম্বি তারকেশ্বরের উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডু । নিজস্ব চিত্র।
ত্রাণ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ প্লাবিত বঙ্গে নতুন নয়। কিন্তু সরাসরি ত্রাণ শিবিরে হামলা!
দামোদরের জলে ডুবে যাওয়া তারকেশ্বরের কেশবচক প়ঞ্চায়েতের মোহনবাটি এলাকা সেটাই দেখল শুক্রবার দুপুরে। সিপিএমের ত্রাণ শিবিরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএম নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতিবাদ জানান ওই শিবিরে আশ্রয় নেওয়া গ্রামবাসীরাও। হামলাকারীদের তাঁরা মারধর করে হটিয়ে দেন। এর জেরে পরে এক সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলা এবং এক সিপিএম নেতার স্ত্রীকে মারধর করা হয় বলে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল আবার সিপিএমের বিরুদ্ধে পাল্টা মারধরের অভিযোগ তুলেছে। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে।
তবে, দু’দলের এই কাজিয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ দুর্গতেরা। তাঁরা বলছেন, একে প্রকৃতি বিরূপ। কবে জল নামবে, কবে তাঁরা ঘরে ফিরবেন, সেই দুশ্চিন্তায় ঘুম উবেছে। তার উপরে ত্রাণ নিয়ে অশান্তি। এর পরে তাঁরা কোথায় আশ্রয় নেবেন, এ প্রশ্নও তুলেছেন।
প্লাবিত মোহনবাটিতে দামোদরের বাঁধে এ দিন ত্রাণ শিবিরটি খোলে সিপিএম। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন শ’দুয়েক মানুষ। দুপুরে সেখানে খিচুড়ি খাওয়ানো হচ্ছিল। অভিযোগ, বেলা ১টা নাগাদ তারকেশ্বরের উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের উত্তম কুণ্ডু দলবল নিয়ে গিয়ে ত্রাণ শিবির বন্ধের নির্দেশ দেন। প্রতিবাদ করলে সিপিএমের তারকেশ্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক মুকুল ঘোষকে মারধর করা হয়। এর পরেই মারামারি শুরু হয়ে যায়। দুর্গতেরাও জড়িয়ে পড়েন। উত্তমবাবু এবং কেশবচক পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বনমালী দে প্রহৃত হন। ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। ক্ষিপ্ত দুর্গতেরা পুলিশের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে দেন। বনমালীবাবু এবং উত্তমবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে হাজির হয় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ত্রাণ শিবিরে আক্রান্ত হওয়ায় এর পরে বদলা নিতে তৃণমূলের লোকজন মুকুলবাবুর বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এমনকী, সিপিএম নেতা স্নেহাশিস রায়ের স্ত্রী রাখিদেবীও পুরসভায় প্রহৃত হন। রাখিদেবী পুরকর্মী। তাঁকে মাটিতে ফেলে তৃণমূলের ছেলেরা পেটায় বলে অভিযোগ।
উত্তমবাবু সিপিএমের বিরুদ্ধে থানায় মারধরের লিখিত অভিযোগ জানালেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত সিপিএম কোনও অভিযোগ জানায়নি। সিপিএমের দাবি, দুপুরে তৃণমূলের ছেলেরা থানার সামনে ভিড় করে থাকায় অভিযোগ জানানো যায়নি। জেলা সিপিএম সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রশাসন ত্রাণ দিতে পারছে না বলে আমাদেরই ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছে। তা-ও ওরা (তৃণমূল) করতে দেবে না! কোথায় বাস করছি আমরা!’’
ত্রাণ শিবিরে হামলার অভিযোগ উত্তমবাবু মানেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা কয়েকজন মিলে বন্যার্তদের পাঁউরুটি, কলা, মিষ্টি দিচ্ছিলাম। তখনই মুকুল ঘোষের নেতৃত্বে বাঁশ, টাঙ্গি, হেঁসো নিয়ে আমাদের উপর হামলা হয়।’’ বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তও বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ফায়দা নিতে সিপিএম লোক খেপাচ্ছে।’’
ঘটনা হল, ত্রাণ নিয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি শাসকদলের নেতাদের একাংশের ভূমিকায় গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার কেশবচকেই তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্তকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান দুর্গতেরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘ওঁরা (তৃণমূল নেতারা) আসছেন যেন সেলফি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার জন্য! অন্যের ত্রাণ শিবির ওদের সহ্য হল না।’’ ত্রাণের অপ্রতুলতার কথা মানেননি প্রশাসনিক আধিকারিকরা।