পুর প্রশাসকের কাজ আটকাতে ‘সুলতানি হুমকি’

বালির পুর-প্রশাসক হিসেবে শুক্রবার এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন হাওড়ার পুর-কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বেলুড়ের কাছে ১৪/১ নম্বর মুখার্জি লেনের একটি নির্মীয়মাণ ছ’তলা বাড়ির সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। বালি পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার তাঁকে জানালেন, এই বাড়িতে তিনতলা নির্মাণের নকশা অনুমোদিত হয়েছিল। এই তথ্য জানতে পেরেই পুর-কমিশনার ডেকে পাঠালেন ওই বাড়ির মালিককে। মালিক না থাকায় এলেন প্রোমোটার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০০:২১
Share:

হাওড়া পুরসভা থেকে বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসছেন বিধায়ক সুলতান সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।

বালির পুর-প্রশাসক হিসেবে শুক্রবার এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন হাওড়ার পুর-কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বেলুড়ের কাছে ১৪/১ নম্বর মুখার্জি লেনের একটি নির্মীয়মাণ ছ’তলা বাড়ির সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। বালি পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার তাঁকে জানালেন, এই বাড়িতে তিনতলা নির্মাণের নকশা অনুমোদিত হয়েছিল। এই তথ্য জানতে পেরেই পুর-কমিশনার ডেকে পাঠালেন ওই বাড়ির মালিককে। মালিক না থাকায় এলেন প্রোমোটার। তাঁকে নির্মাণকাজ অবিলম্বে বন্ধ করে বাড়ির সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে পুরসভায় দেখা করতে বললেন পুর-কমিশনার। এই ঘটনার পরে পুরসভায় ফিরতেই পুর-কমিশনারের কাছে ফোন এল বালির তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহের। ফোনে কমিশনারকে তিনি বলেন, বালিতে উন্নয়নের কাজ করতে এলে তাঁকে জানাতেই হবে। তাঁর অনুমতি ছাড়া বালিতে উন্নয়নের কাজ করা যাবে না।

Advertisement

বালির তৃণমূল বিধায়কের এই ফোনকে ঘিরে কার্যত এর পরেই তোলাপাড় শুরু হয় হাওড়া পুরসভায়। গোটা ঘটনাটি তিনি মেয়র রথীন চক্রবর্তী ও হাওড়া জেলার তৃণমূল সভাপতি (শহর) তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়কে ফোনে জানান। এর পরেই পুরসভায় ছুটে আসেন মেয়র। এ নিয়ে আলোচনার জন্য কয়েক জন মেয়র পারিষদ ও কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। খবর যায় দলের শীর্ষস্তরে। পরে অবশ্য বালির তৃণমূল বিধায়ক নিজেই কথা বলতে ছুটে আসেন হাওড়া পুরসভায়। সাংবাদিকদের সামনে খোদ বিধায়কই কমিশনারের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘কমিশনার নিজে এলাকায় উন্নয়নের কাজে গেলে বিরোধীরা বাধা দিতে পারে, সেই কারণেই আমাকে জানিয়ে এলাকায় যাওয়ার কথা বলেছিলাম।’’

বিরোধী বলতে কাদের কথা বলছেন বিধায়ক? সংবাদমাধ্যমের এই প্রশ্নের জবাবে বিধায়ক বলেন, ‘‘বিরোধী বলতে সিপিএম-এর কথা বলেছি।’’ যদিও বামেদের দাবি, কমিশনারকে ধমক দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় বিপদ বুঝে এখন বিরোধীদের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন বিধায়ক।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে খবর, বালি পুর-এলাকাকে হাওড়া পুরনিগমের অন্তর্ভুক্ত করার পরে পুর-কমিশনারকে প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মেয়রের নির্দেশে গত কয়েক দিন ধরে তিনি বালির উন্নয়নের খসড়া পরিকল্পনা করতে এলাকা পরিদর্শনের কাজ করছিলেন। এ দিনও তিনি বালি, বেলুড় ও লিলুয়ার বিভিন্ন অংশে পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) বিভাস হাজরা-সহ বালি পুরসভার বিভিন্ন আধিকারিকেরা। পুর-কমিশনার নীলাঞ্জনবাবু জানান, এ দিন তাঁরা মূলত বালি পুর-এলাকায় বেহাল পরিকাঠামো সরেজমিন খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁরা যখন বেলুড় এলাকায় মুখার্জি লেনের কাছে যান, তখন একটি ‘বেআইনি’ নির্মাণের কাজ তাঁর নজরে আসে। তিনি সেই কাজ বন্ধ করে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারীকে পুরসভায় ডেকে পাঠান। পুর-কমিশনার বলেন, ‘‘এর পরে আমি পুরসভায় চলে আসি। তার পরে বিধায়কের ফোন পাই। তিনি জানতে চান, কেন তাঁকে না জানিয়ে বালি এলাকায় গিয়েছি। বালিতে উন্নয়নের কাজ করতে হলে তাঁর অনুমতি নিতে হবে।’’ বিধায়কের ফোনের জবাবে কমিশনার বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি কোনও কথা বলব না। যা বলার মেয়র ও মেয়র পারিষদেরা বলবেন। আপনি দয়া করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন।’’

কিন্তু কেন বিধায়ক এমন নির্দেশ দিতে গেলেন? তবে কি বেআইনি ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করাতেই বিধায়ক এমনটা করলেন? অবশ্য এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধায়ক বলেন, ‘‘আমি কোনও দিনই বেআইনি নির্মাণকে প্রশ্রয় দিই না। তা ছাড়া আমি নিজেই তৃণমূলের বিধায়ক। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাই ওই কাজ আটকেছে। এতে আমার কোনও আপত্তির প্রশ্নই ওঠে না।’’

তবে এই ঘটনাটিকে পুর-কমিশনার যে মেনে নিতে পারেননি, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে সরাসরি হুমকি না দেওয়া হলেও বিধায়কের ইশারা আমার কাছে স্পষ্ট। তা আমার ভাল লাগেনি।’’ পুর-কমিশনারের দাবি, যত বাধাই আসুক, ওই এলাকায় ফের তিনি যাবেন। বেআইনি নির্মাণকাজ দেখলে বন্ধ করতেও উদ্যোগী হবেন বলে জানান তিনি।

এই ঘটনায় পুর-কমিশনারের পাশে দাঁড়িয়েছেন খোদ কৃষি বিপণন মন্ত্রী এবং হাওড়ার মেয়র। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘বিধায়কের এ ভাবে কথা বলার প্রয়োজন ছিল না। এ ব্যাপারে মেয়রের সঙ্গে কথা বললেই হত। এটা তিনি ঠিক করেননি।’’ একই সুরে মেয়র রথীনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বালির উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কারও অনুমতির দরকার আছে বলে মনে করি না। কে আটকাবে? বালিতে বেআইনি কাজ বন্ধ করা হবে। গোটা ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement