রিষড়া পুরসভা।—নিজস্ব চিত্র।
এমন প্রাপ্তি হতে পারে তা ভাবতে পারেননি রিষড়া পুরসভার কাউন্সিলররা। পুজোর মুখে ‘মেঘ না চাইতে জল’ এর মতো তাঁদের হাতে এসে গেল নগদ ২৫ হাজার টাকা বোনাস। তা পেয়ে কারও চোখ কপালে উঠল, কেউ বা খোশ মেজাজে নেমে পড়লেন পুজোর কেনাকাটায়।
সৌজন্য: রিষড়া পুরসভার সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা শঙ্কর সাউ।
দুর্নীতির নানা অভিযোগে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সপ্তাহখানেক আগে পুরপ্রধানের পদ গিয়েছে শঙ্করবাবুর। কিন্তু পদ হারানোর আগেই তিনি নির্দেশ দিয়েছেন পুজোর সময় পুরসভার সব কাউন্সিলরকে ২৫ হাজার টাকা করে বোনাস দেওয়ার। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। যার রেশ গিয়ে পৌঁছেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও। তৃণমূল সূত্রে খবর, বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী দলের এক রাজ্য নেতাকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ‘বোনাস’-এর টাকা দেওয়া বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) রজত নন্দা বলেন, ‘‘ওই টাকা দেওয়া বন্ধ করতে বলা হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কাউন্সিলরদের বোনাস দেওয়ার কোনও সংস্থান নেই। যাঁরা ইতিমধ্যেই ‘বোনাস’ নিয়েছেন, নতুন পুরপ্রধান দায়িত্ব নিলে তাঁদের ওই টাকা ফিরিয়ে দিতে বলা হবে।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানান, এটা আশ্চর্য ব্যাপার! কাউন্সিলররা সাম্মানিক পান। কিন্তু তাঁদের বোনাস হচ্ছে, এমনটা প্রথম শুনলেন।’’ বিতর্ক উঠলেও শঙ্করবাবু অবশ্য এর মধ্যে ‘অনৈতিক’ কিছু দেখছেন না। তাঁর যুক্তি, ‘‘পুরসভার তহবিল থেকে ওই টাকা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে অন্য তহবিল থেকে। কাউন্সিলরদের বোনাস দেওয়া হলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?’’
সম্প্রতি পুর-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে আসে। তৃণমূলের শীর্ষ মহলেও তা পৌঁছয়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শঙ্করবাবু এবং উপ-পুরপ্রধান তথা আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের স্বামী সাকির আলিকে পদত্যাগ করতে বলে দল। গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রশাসনের কাছে ওই দু’জন পদত্যাগপত্র জমা দেন। তারপর ফের ‘বোনাস’-বিতর্ক সামনে এল।
পুরসভা সূত্রে খবর, গত ২৩ সেপ্টেম্বর শঙ্করবাবু (তখন পুরপ্রধান) রিষড়া মেলার (পুরসভা ওই মেলা পরিচালনা করে) অ্যাকাউন্ট থেকে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে ২৫ হাজার টাকা করে ‘বোনাস’ দেওয়ার জন্য পুরসভার অর্থ বিভাগকে লিখিত নির্দেশ দেন। পুরসভায় কাউন্সিলরের সংখ্যা ২৩ (তৃণমূলের ২০, সিপিআই, কংগ্রেস এবং বাম সমর্থিত নির্দল একটি করে)। ফলে সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বোনাসের জন্য ধার্য করা হয়। ১৭ জন কাউন্সিলর ওই টাকা তুলে ফেলেছেন। নেননি ৬ জন। তাঁরা সকলেই তৃণমূল কাউন্সিলর।
তৃণমূল শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, দলে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন শঙ্করবাবু। তাই গদি বাঁচাতে ‘মরিয়া চেষ্টা’ হিসেবে কাউন্সিলরদের ‘হাতে রাখতে’ই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। এক তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, ‘‘অর্থ সংক্রান্ত যে কোনও ব্যাপার বোর্ড অব কাউন্সিলর্স মিটিঙে আলোচনা করা বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। পুরপ্রধান বোনাস দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। পুরসভার অফিসার সেই কাগজে সই করলেন। তা হলে এটা পুরসভার বিষয় নয়?’’
এখন দেখার দলে ‘কোণঠাসা’ শঙ্করবাবু এই বিতর্ক কী ভাবে সামলান?