বিক্ষোভ সামাল দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুধবার চণ্ডীতলা-১ ব্লকের গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েতে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত সদস্য। সেই জল গড়াল গ্রামেও। ডেঙ্গি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। দীর্ঘক্ষণ আটক হয়ে রইলেন প্রধান এবং অন্য সদস্যরা। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলে প্রধান কাবেরী দাসের ডাকা ওই বৈঠকের মাঝেই তৃণমূল সদস্য জ্যোতির্ময় আদক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাঁর এলাকার অন্তর্গত উত্তর শান্তিপুরে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি। মঙ্গলবার মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকরা সেখানে পরিদর্শনে যান। তাঁরা ওই এলাকায় বেশি করে ব্লিচিং পাউডার এবং মশার লার্ভা মারার তেল ছড়ানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু পঞ্চায়েতের তরফে তা করা হচ্ছে না। আর কত মানুষ মারা গেলে পঞ্চায়েতের তরফে ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি প্রশ্নও তোলেন। জ্যোতির্ময়বাবুর অভিযোগ, তখনই প্রদীপ সাউ নামে এক সদস্য চেয়ার তুলে তাঁকে মারতে যান। শুরু হয় বচসা।
এ খবর চাউর হতেই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ উত্তর শান্তিপুর থেকে ৫০-৬০ জন গ্রামবাসী এসে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় কোনও কাজই হচ্ছে না। পঞ্চায়েত হাত গুটিয়ে বসে আছে। অথচ পাশের এলাকায় মশার লার্ভা মারার তেল এবং ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে। পুলিশের মধ্যস্থতায়রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তাপস সানকি নামে এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘‘আমাদের এলাকায় ঘরে ঘরে জ্বর। ডেঙ্গিতে পনেরো বছরের একটা ছেলে মারা গেল। এর পরেও পঞ্চায়েতের কোনও হেলদোল নেই। এখানকার পঞ্চায়েত সদস্য তো ঠিক কথাই বলেছিলেন। ওঁকে কেন মারতে যাওয়া হল?’’ অভিযোগ উড়িয়ে প্রদীপবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। মিটিংয়ে তো হয়েই থাকে। তবে চেয়ার ছুড়ে মারতে গিয়েছি, এটা ঠিক নয়।’’ প্রধান বলেন, ‘‘কোন এলাকায় কী ভাবে কাজ করা হবে তা ঠিক করতেই বৈঠক হয়। কথা-কাটাকাটির বেশি কিছু নয়।’’
তৃণমূল শিবিরের একাংশের দাবি, দলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। কিন্তু ডেঙ্গির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মানুষকে পরিষেবা দেওয়া নিয়ে আলোচনায় এটা ঠিক নয়।’’ প্রদীপবাবু, জ্যোতির্ময়বাবু বা প্রধান— কেউই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানেননি। ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা ভবানী দাসও জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস এ দিন তাঁকে দেখতে বাড়িতে যান।