পান্ডুয়ায় প্রার্থী নিয়ে বিক্ষোভ বাড়ায় অস্বস্তিতে দল

কোনওভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না বিক্ষোভ।পান্ডুয়ায় নেত্রীর মনোনীত রহিম নবিকে দলের প্রার্থী হিসাবে মানতে নারাজ তৃণমূলের চার স্থানীয় নেতা। এমনকী তেমন পরিস্থিতি হলে তাঁরা যে বিকল্প হিসাবে কাউকে খাড়া করতে পিছপা হবেন না তাও দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে সোমবার আভাস দেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:৪০
Share:

ট্রেনে প্রচারে রহিম নবি। — সুশান্ত সরকার

কোনওভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না বিক্ষোভ।

Advertisement

পান্ডুয়ায় নেত্রীর মনোনীত রহিম নবিকে দলের প্রার্থী হিসাবে মানতে নারাজ তৃণমূলের চার স্থানীয় নেতা। এমনকী তেমন পরিস্থিতি হলে তাঁরা যে বিকল্প হিসাবে কাউকে খাড়া করতে পিছপা হবেন না তাও দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে সোমবার আভাস দেন তাঁরা।

প্রার্থী নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দিতেই ওই বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা সভাপতি। এক সময় নিজেদের মতে অনড় ওই চার নেতাকে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। যদিও তাতে কাজ বিশেষ হয়নি। উল্টে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। চার নেতার ক্ষোভ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সোমবার নবিকে প্রার্থী না মানার যে সুর শোনা গিয়েছিল নেতাদের গলায়, মঙ্গলবার তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল দলের অঞ্চল সভাপতিদের গলায়। এই পরিস্থিতিতে গুটিকতক দলীয় কর্মীকে নিয়েই এদিন প্রচার শুরু করলেন ময়দানের তারকা ফুটবলার রহিম নবি।

Advertisement

এ দিন দুপুরে ব্লকের ১৬টি অঞ্চলের দলীয় সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রার্থীপদের দাবিদার আনিসুল ইসলাম, অসিত চট্টোপাধ্যায় এবং বাদশা আলম। ছিলেন দলের আর এক নেতা সঞ্জয় ঘোষও। জড়ো হয়েছিলেন দলের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। কলবাজারে বাদশা আলমের কার্যালয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। সোমবার জেলা সভাপতি পান্ডুয়ায় এসে দলের নেতাদের জানিয়েছিলেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবির নাম প্রার্থী হিসেবে বেছেছেন। তাই তাঁকেই সবাইকে মেনে নিতে হবে। তাঁর হয়েই নির্বাচনের কাজ করতে হবে।

এ দিন বৈঠকের শুরুতেই অসিতবাবু ওই প্রসঙ্গে দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। অঞ্চল সভাপতিরা সমস্বরে জানিয়ে দেন, নবিকে তাঁরা মেনে নেবেন না। যদি তাঁকে সরিয়ে স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করা হয় তা হলেই তাঁরা নির্বাচন করবেন। নচেৎ বসে যাবেন। নবিকে না মানার ক্ষোত্রে তাঁরা এতটাই বেপেরোয়া যে, সবরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তাঁরা যে তৈরি এমন কথাও জানাতে ভোলেননি। বৈঠকের পরে বাদশা বলেন, ‘‘কর্মী-সমর্থকদের ছাড়া আমাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। ওঁদের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত।’’

এলাকায় দলের কর্মীদের কাছে তিনি যে কতটা অনাহূত, তার কিছুটা মালুম পাওয়া গেল প্রচারে নবির সঙ্গে লোকবল দেখে। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পান্ডুয়া স্টেশনে আসেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন পান্ডুয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য রেখা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্বামী মলয়বাবু-সহ সাকুল্যে জনা পনেরো লোক। প্ল্যাটফর্মে এবং ট্রেনের কামরায় উঠে জনসংযোগ করলেন ফুটবল মাঠের এই ‘ইউটিলিটি’ ফুটবলার। দুপুরে রেখাদেবী দলের ব্লক সভাপতি আনিসুল ইসলামের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, নবির হয়ে প্রচারে নামায় সোমবার রাতে সঞ্জয় ঘোষ মোবাইলে ফোন করে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে গালিগালাজ করেন। এতে অপমানিত হয়েই তাঁরা পতদ্যাগ করছেন। আনিসুল জানান, বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা করা হবে। জেলা সভাপতির কাছে ওই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সঞ্জয়ের দাবি, ‘‘ওঁকে কিছুই বলিনি। আস‌লে রাজনৈতিক চক্রান্ত হচ্ছে।’’ অন্য এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘উনি নিজেই বলছেন, সোমবার ওকে অপমান করা হয়। আর মঙ্গলবার প্রচার করার পরে পদত্যাগপত্র দেওয়ার কথা মনে হল!’’

গত শুক্রবার বিকে‌লে রহিম নবির নাম ঘোষণার পর থেকেই পান্ডুয়া তৃণমূলের একটি বড় অংশ দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নেমে পড়েছে। নবিকে সরিয়ে আনিসুল, অসিত বা বাদশার মধ্যে কোনও এক জনকে প্রার্থী করার দাবিতে মিছিল, বৈঠক চলছেই। এখন দেখার, শেষ পর্যন্ত ওই দাবির সামনে তৃণমূল নেতৃত্ব কোন পথে হাঁটেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement