ঝুঁকি: নিত্য এ ভাবেই বিপদ মাথায় নিয়ে চলছে যাতায়াত।
ব্যবধান মাত্র চারদিনের। একই জায়গায় ফের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক মহিলার।
উলুবেড়িয়ার শ্রীরামপুরে গত শনিবার ইঞ্জিন ভ্যানের পিছনে লরির ধাক্কায় চালক-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার একই জায়গায় অটোরিকশার পিছনে ধাক্কা মারে বাস। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাটি একটি ডাম্পারের পিছনে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। মৃত্যু হয় অটোর আরোহী টগরী মাঝির (৪০)। তাঁর বাড়ি উলুবেড়িয়ার পাইখালা গ্রামে। বাগনানে ব্যাঙ্কে যাওয়ার জন্য কুলগাছিয়ার পিরতলা থেকে উলুবেড়িয়া-বাগনান রুটের ওই অটোয় চাপেন। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি অটোচালক। অটোরিকশাটির কোনও লাইসেন্স ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দুঘর্টনার পর ফের বেআইনি অটোর রমরমা নিয়ে সরব হয়েছেন উলুবেড়িয়া, বাগনানের মানুষ। বেআইনি ইঞ্জিন ভ্যান রুখতে ব্যবস্থা নিলেও অটোরিকশার ক্ষেত্রে এখনও জেলা প্রশাসনকে তেমন উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। প্রশাসনের এই গাফিলতিই যে বেআইনি অটোর দাপট বাড়িয়েছে তা জানিয়েছেন যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব পুলিশ-প্রশাসন।
বাগনান, উলুবেড়িয়া, রানিহাটি প্রভৃতি এলাকায় মুম্বই রোডে (৬ নম্বর জাতীয় সড়ক) কয়েকশো অটো চলাচল করে। যদিও জাতীয় সড়কে অটোরিকশা চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। জাতীয় সড়ক সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, মুম্বই রোড ছয় লেনের করা হয়েছে। ফলে যানবাহনের গতি অনেক বেড়েছে। এর জন্য গাড়িগুলি সরকারকে টোল দেয়। কিন্তু যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে অটোর দাপটে। জাতীয় সড়ক সংস্থার ওই কর্তা জানান, দেখা গিয়েছে, অনেক সময়ে ওভারটেক করে অন্য লেনে ঢুকে পড়ছে অটো রিকশা। তার উপর রাস্তার উপরেই যেখানে সেখানে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে যাত্রী তোলার জন্য। ফলে পিছনে দ্রুতগতিতে আসা অন্য গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সবের জন্যই বাড়ছে দুর্ঘটনা।
মৃত টগরী মাঝি। নিজস্ব চিত্র
কথাটা যে সত্যি, তার প্রমাণ মিলেছে এ দিনের দুর্ঘটনায়। প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশ জানিয়েছে, বাগনানের দিকে আসছিল অটোরিকশাটি। একটি বাস অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করে সে। পরে বাসেরই সামনে পড়ে যায় অটোরিকশাটি। বাসের চালক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অটোরিকশাটিকে ধাক্কা মারেন।
মুম্বই রোডে বাগনান-কোলাঘাট, বাগনান-উলুবেড়িয়া, উলুবেড়িয়া-রানিহাটি, রানিহাটি-ধুলাগড়ি রুটে অটো চলে। শুধু উলুবেড়িয়া-রানিহাটি রুটে গড়ে প্রতিদিন ৪০০ অটো চলে। অভিযোগ, বেআইনি অটো থেকে সরকার রাজস্ব না পেলেও স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও পুলিশের মধ্যে মোটা টাকার লেনদেন হয়। যদিও দু’পক্ষই তা অস্বীকার করেছে।
আইএনটিটিইউসি-র বাগনানের সভাপতি কাজী শাহনওয়াজ বলেন, ‘‘বিভিন্ন অটো রুটের স্টার্টার আছেন। তাঁদের নিয়োগ করেন অটো চালকেরাই। তাঁরাই টাকা নেন।’’ মুম্বই রোডে বেআইনি অটোর চলাচল প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওগুলি অটো নয়। পণ্য পরিবহণের জন্য ছোট গাড়ি কিনে তার মাথায় ছাউনি দিয়ে যাত্রী বহন করেন এক শ্রেণির চালক। এটা বেআইনি। পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরেরই এ ব্যাপারে নজর রাখা উচিত।’’
হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুমিত কুমারের দাবি, ‘‘আমরা নিয়মিত নজরদারি চালাই। তবে এ দিন কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটলো তার তদন্ত চলছে।’’
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের পরিকাঠামো নেই। ফলে বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যায় না। পুলিশের দাবি, নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মুম্বই রোড থেকে বেআইনি অটো ধরা হয়। তাদের মোটা টাকা জরিমানাও করা হয়।
কিন্তু তা সত্যি হলে বেআইনি অটো নিয়ে অভিযোগ উঠছে কেন? এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি পরিবহণ কর্তারা।