সরকারি স্কুলে দিনের পর দিন কী ভাবে বেসরকারি প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলির ক্লাস চলছিল, তা নিয়ে এ বার তদন্তের নির্দেশ দিল হাওড়া জেলা প্রশাসন। এর পাশাপাশি, সোমবার ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বেসরকারি প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলিকে দিয়ে ছাত্রদের ক্লাস নেওয়ার আগে তিনি স্কুল পরিচালন কমিটির অনুমতি নিয়েছিলেন কি না। কারণ, পদাধিকার বলে ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি হলেন জেলাশাসক নিজে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তপনকুমার গোস্বামী।
গত শনিবার স্কুলে অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাওড়ার জেলাশাসকের বাংলোর সামনে বিক্ষোভ দেখায় একদল পড়ুয়া। সঙ্গে ছিলেন তাদের অভিভাবক ও হাওড়া জেলা স্কুলের শিক্ষকেরা। ওই দিনই স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের তরফে ওই স্কুলের নানা সমস্যা ও অনিয়ম নিয়ে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীর কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রতি শনিবার স্কুলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্লাসের মাঝে ওই ক্লাস হচ্ছিল স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসঘরে। এবং তা পড়াশোনা বন্ধ রেখে। এই ক্লাসগুলিকে ‘অ্যাড-অন স্টাডিজ’ বলে উল্লেখ করা হত এবং টাকার বিনিময়ে ছাত্রদের ওই ক্লাস করাতে বাধ্য করানো হচ্ছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই শিক্ষকদের শো-কজের হুমকি দেওয়া হত বলে তাঁদের অভিযোগ।
এ সব অভিযোগ পাওয়ার পরেই জেলাশাসকের নির্দেশে এ দিন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠান অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রাজশ্রী মিত্র। তপনবাবু রাজশ্রীদেবীর সঙ্গে দেখাও করেন।
পরে রাজশ্রীদেবী বলেন, ‘‘তপনবাবু স্কুলে বেসরকারি প্রশিক্ষণ সংস্থাকে দিয়ে ক্লাস করানোর বিষয়টি অবৈতনিক বলে জানিয়েছেন। অর্থাৎ, টাকার বিনিময়ে তা হত না। তিনি যা-ই বলুন, গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। স্কুল পরিচালন কমিটির অনুমতি ছাড়া তিনি কী ভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, তা-ও দেখা হবে। এ নিয়ে আলোচনার জন্য তাই সামনের সপ্তাহেই স্কুল কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, স্কুলের সেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ দিনও বলেছেন, ‘‘ওই প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও আর্থিক বিষয় ছিল না। তা জেলা প্রশাসন তদন্ত করলেই জানতে পারবে। আমি চেয়েছিলাম, বাকি শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই ক্লাস করাব। সেই সময় পাইনি।’’
এ দিকে স্কুলের অভিভাবক, ছাত্র ও শিক্ষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, কোনও সরকারি স্কুলে কি এই ধরনের বেসরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ক্লাস করানো আইনত কি সম্ভব? যদি না হয়, তা হলে জেলা প্রশাসন এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন?
জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এখনই এটা নিয়ে কথা বলার কিছু হয়নি।’’