পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আক্রান্তের

প্রমাণাভাবে খালাস অ্যাসিড হামলাকারী

অ্যাসিড আক্রান্তের নাম আরিফা বেগম। তাঁর বাঁ হাতে এখনও অ্যাসিডে পোড়ার দাগ রয়েছে। গত ১৭ অগস্ট উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস হয়ে গেলেন। বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়েছেন প্রমাণের অভাবেই অভিযুক্তদের খালাস করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেড়িয়ায়। আদালতের রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অ্যাসিড হামলায় জখম গৃহবধূ ও তাঁর পাশে দাঁড়ানো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারা।

Advertisement

অ্যাসিড আক্রান্তের নাম আরিফা বেগম। তাঁর বাঁ হাতে এখনও অ্যাসিডে পোড়ার দাগ রয়েছে। গত ১৭ অগস্ট উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়। তাতেই বেকসুর খালাস পেয়ে যান ওই মহিলার স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির ছয় অভিযুক্ত। আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে পু‌লিশ কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি।

আরিফার বাবা বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘‘আমরা হাইকোর্টে আপিল করব।’’ অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র রাজ্য সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নিম্ন আদালতে অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্তদের খালাস হওয়ার ঘটনা বিরল। আমরা বহু অ্যাসিড হামলা নিয়ে মামলা করেছি। এরকম আগে দেখিনি। ওই মহিলার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা যদি চান, হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন। আমরা তাঁদের এই বিষয়ে সাহায্য করব।’’

Advertisement

২০১২ সালে উলুবেড়িয়া বাজারপাড়ায় শেখ নজরুলের সঙ্গে আরিফার বিয়ে হয়। তাঁর বাপের বাড়ি উলুবেড়িয়ার পালোড়া গ্রামে। পুলিশের কাছে আরিফা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁর উপরে নিয়মিত শারীিরক ও মানসিক অত্যাচার করত। ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর সকালে তাঁর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির কয়েকজনের বচসা হয়। তাঁকে জোর করে অ্যাসিড খাওয়ানোর চেষ্টা হয়। তিনি বাধা দিলে সেই অ্যাসিড এসে পড়ে তাঁর বাঁ হাতে। হাতের অনেকটা অংশ পুড়ে যায়। তিনি চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন এবং তাঁর বাপের বাড়িতে খবর দেন। বাপের বাড়ির লোকজন তাঁকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালের রিপোর্টে এটিকে অ্যাসিডের ক্ষত বলেই জানানো হয়। আরিফার পরিবার তাঁর স্বামী-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করে। বাকি পাঁচজন আগাম জামিন পেয়ে যায়। তদন্ত করে পুলিশ ছ’জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেয়। কিন্তু চূড়ান্ত শুনানিতে পুলিশ চার্জশিটে দাখিল করা সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। তদন্তে পুলিশ উদ্ধার হওয়া অ্যাসিডের যে বোতলটি আদালতে পেশ করে, ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায় সেটি মদের বোতল। যদিও পুলিশ এর দায় চাপিয়েছে আরিফা এবং তাঁর পরিবারের উপরেই। সরকারি আইনজীবী মনীশ চাউলিয়া বলেন, ‘‘আরিফার পরিবারের লোকজন আদালতে ঠিকমতো সাক্ষ্য দিতে পারেননি। তাঁদের এই বিষয়ে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এজলাসে উঠে তাঁরা গোলমাল করে ফেলেন।’’ অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে যা পাওয়া গিয়েছিল সেটাই আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তে কোনও গাফিলতি ছিল না।

রায়ের কথা শুনে হতাশ আরিফা। মামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি বাপের বাড়িতেই আছেন। তাঁর বাঁ হাতের কনুই পর্যন্ত পোড়া দাগ। তিনি এই হাতে ভারী কোনও কাজও করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘‘জরির কাজ করে যে বাবাকে সাহায্য করব, তারও উপায় নেই। একটি হাতে জোর পাচ্ছি না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ আমার হাতের এই অবস্থার জন্য তাহলে দায়ী কে?’’

আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে আরিফার শ্বশুর শেখ গুলফাম বলেন, ‘‘জানতাম সঠিক বিচার পাব। আমরা প্রথম থেকেই বলেছি এর সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। ওই মহিলা অ্যাসিড দিয়ে শৌচাগার সাফ করছিলেন। সেটিই ছিটকে পড়ে তিনি জখম হন। পরে ফাঁসানোর জন্য আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপান।’’

অভিযুক্তদের আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, ‘‘কীভাবে ওই মহিলা অ্যাসিডে জখম হলেন সে বিষয়ে আদালতের রায়ে কিছু বলা নেই। আদালত জানিয়েছে, আমার মক্কেলরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement