—প্রতীকী চিত্র।
বিড়লা গোষ্ঠীর জয়শ্রী টেক্সটাইল কারখানায় নয় শ্রমিককে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে সায় দেবে না রাজ্য সরকার। সোমবার কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে এভাবেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। প্রয়োজনে আইনি লড়াইতেও রাজ্য সরকার শ্রমিকদের পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।
দৈনিক ৬ টাকা বেতন বাড়ানোর দাবিতে চলতি বছরের মে মাসে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিক-বিক্ষোভে কারখানার এক কর্তা প্রহৃত হন। এরপরই ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। ২৪ জন শ্রমিককে সাসপেন্ড করা হয়। পরে পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বৈঠকে ঠিক হয়, সাসপেন্ডেড শ্রমিকদের মধ্যে ১৫ জনকে কাজে ফেরানো হবে। বাকি ৯ জনের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, কাউকে বরখাস্ত করা হবে না। যদিও পয়লা ডিসেম্বর কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই ন’জনকে বহিষ্কার করেন। প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে ৮টি শ্রমিক সংগঠন। শ্রম দফতর সূত্রের খবর, সোমবার বিকেলে কলকাতায় বৈঠকে শ্রমিক-নেতারা মন্ত্রীকে জানান, তাঁর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে ওই শ্রমিকদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার বরখাস্তের সিদ্ধান্ত সমর্থন করছে না। বৈঠকে হাজির শ্রীরামপুরের ডেপুটি শ্রম কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীকে মন্ত্রী বলেন, তিনি যেন শীঘ্রই কারখানার সমস্যা নিয়ে শুনানি শেষ করে বরখাস্তের অনুমোদন বাতিল করেন। এর পরেও যদি মালিকপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন এবং শ্রমিকরা যদি আদালতের দ্বারস্থ হন, সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে তাঁদের সাহায্য করা হবে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকের পরে সিটু নেতা মণি পাল, আইএনটিটিউসি নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বরখাস্ত হলে ওই শ্রমিকদের পরিবার ভেসে যাবে। মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী শ্রম দফতর নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’’ তাঁরা জানান সাতটি শ্রমিক সংগঠন একসঙ্গে আন্দোলন করছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আন্দোলনের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।
কারখানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মন্ত্রীর বক্তব্য লিখিত আকারে পাইনি। ফলে এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তদন্তে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ প্রমাণিত হওয়াতেই শ্রম-আইন অনুযায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়।’’ তবে এ দিন ফোন ধরেননি শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক।
রাজ্য সরকার আর মালিকপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের জেরে কার্যত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে পড়ে শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।