প্রতীকী ছবি
আলু সংরক্ষণকারীদের ঘাড়ে অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপাচ্ছেন কয়েকটি হিমঘর কর্তৃপক্ষ। আরামবাগের হরিণখোলা-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকার আলু ব্যবসায়ীদের তোলা এই অভিযোগের মীমাংসা না হওয়ায় স্থানীয় ৫টি হিমঘর গত ১১ দিন ধরে কার্যত বন্ধ। ব্যবসায়ীরা আলু বের না করায় প্রায় ৮০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে গেছেন। আলু বের করতে না পারায় চাষিরাও বিপাকে।
কাবলে বিভাগের গ্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, গত বছর পর্যন্ত হিমঘরে আলু ঢোকানো, তা বের করা এবং হিমঘরের ছাউনিতে শুকনো-সহ লরিতে তোলা পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৮৩টাকা ৭৫ পয়সা। এ বছর সরকারি তরফে ভাড়া বাড়ায় সেটা হয়েছে ৯০ টাকা। এতে কারও কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এই দুই অঞ্চলের ৫টি হিমঘর কর্তৃপক্ষ নোটিশ ঝুলিয়েছেন, হিমঘর থেকে মাল বের করে তাদের ছাউনিতে শুকনো ও প্রতি বস্তার সেলাই কেটে ঢেলে দেওয়ার জন্য ৬০ পয়সা এবং আলু বাছাই করে লরিতে বোঝাই করার জন্য ২ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে।
ওই ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্যর অভিযোগ, “সরকারি দামে নির্ধারণ করার পরও ওই ৫টি হিমঘর কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে মোট ৩টাকা ১০ পয়সা বেশি নিতে চাইছেন। এতেই আমরা আপত্তি তুলে কর্মবিরতি চালাচ্ছি। চাষিরা যেহেতু তাঁদের আলু কেন-বেচার ক্ষেত্রে আমাদের উপরেই নির্ভর করেন তাই তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে।”
সরকারি ভাড়া বৃদ্ধির বাইরেও অতিরিক্ত খরচ ধরার অভিযোগ নিয়ে মালিকদের মধ্যে অরূপ বসু বলেন, “ব্যবসায়ীরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। সরকারি ভাড়া অনুয়ায়ীই এটা নেওয়া হচ্ছে।’’ কী চুক্তি ছিল? সংগঠনের তরফে জানানো হয়,এ খানের হিমঘরগুলির যা ধারণক্ষমতা তার চেয়ে অনেক কম আলু উৎপাদন
হত। তাই ২০০৭ সাল নাগাদ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, বাইরে থেকে আলু এনে তাঁরা হিমঘর ভর্তি করবেন। এবং তার দরুন আলু বের হওয়ার পর ছাউনিতে শুকনো এবং গাড়িতে তোলা পর্যন্ত খরচ হিমঘর বহন করবে। যদিও ওই হিমঘরগুলি কোনওদিনই ভর্তি করা যায়নি বলে হিমঘর মালিকদের অভিযোগ।
বিষয়টা নিয়ে এলাকার বিধায়ক প্রতিনিধি তথা হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুল আজিজ খান বলেন, “হিমঘরগুলির অচলাবস্থা কাটাতে দু-একদিনের মধ্যেই বসা হবে।”
এ দিকে হিমঘরগুলির কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা যেমন সমস্যায় পড়েছেন, তেমনই চাষিরাও বিপাকে। চাষিদের অনেকের অভিযোগ, লকডাউনে জমানো টাকা শেষ। আমপানের বিপর্যয়ে তিল চাষ, বোরো ধান সবই নষ্ট হয়েছে। এখন পরবর্তী আমন ধান চাষের জন্য একমাত্র ভরসা হিমঘরে গচ্ছিত আলু বিক্রি করে সার ইত্যাদি কেনা। হিমঘর বন্ধ থাকায় চাষের প্রস্তুতিও নেওয়া যাচ্ছে না।