মামাবাড়িতে ঠাঁই চাঁপদানির শিশুকন্যাদের

ফলকের বয়স প্রায় সাড়ে চার বছর। পায়েলের তিন। দেড় বছরে পড়ল আলো। তিনটি শিশু কোনও দিন ঠাকুমার আদর পায়নি। পিসি-পিসেমশাই এবং দুই জেঠাও সব সময় ‘দূর ছাই’ করেছে। জন্ম থেকেই শিশুগুলি দেখে আসছে মায়ের উপরে অত্যাচার।

Advertisement

তাপস ঘোষ

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০২:০৫
Share:

তিনজন: খেলায় মজে শিশুরা। নিজস্ব চিত্র

ফলকের বয়স প্রায় সাড়ে চার বছর।

Advertisement

পায়েলের তিন।

দেড় বছরে পড়ল আলো।

Advertisement

তিনটি শিশু কোনও দিন ঠাকুমার আদর পায়নি। পিসি-পিসেমশাই এবং দুই জেঠাও সব সময় ‘দূর ছাই’ করেছে। জন্ম থেকেই শিশুগুলি দেখে আসছে মায়ের উপরে অত্যাচার।

কেন? শিশুগুলির মা, চাঁপদানির কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা সীমা মালাকারের ‘অপরাধ’, পর পর তিনটি মেয়ের জন্ম দিয়েছেন তিনি। আর তাই মেয়েগুলি পরিবারের আদর পায়নি এবং সীমাদেবীকে মারধর সহ্য করতে হয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারও ওই মহিলাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে তাঁর শাশুড়ি, ননদ-নন্দাই, ভাসুর-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় সীমাদেবী এখন চন্দননগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তদের পুলিশ ধরতে পারেনি। তারা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গোটা ঘটনায় পড়শিরা তো বটেই, স্তম্ভিত মনোবিদরাও। তাঁরা বলছেন, যে যুগে মেয়েরা মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে মহিলা, সেখানে এমন ঘটনা কখনওই কাঙ্ক্ষিত নয়। অনেক গরিব পরিবারেও মেয়েরা সম্মানের সঙ্গে বাঁচে। সেখানে কলকাতার কাছের একটি মফস্সল শহরে এমনটা ভাবা যায় না। মনোবিদ কৌশিক মুন্সি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। মেয়েরা এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। এটা বোঝার সময় এসেছে। কাউন্সেলিং করলে অনেক সময়েই কাজ হয়।’’

যে সব প্রতিবেশী সীমাদেবীকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে নিয়ে যান, তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘সীমাদেবী চাপা স্বভাবের। আগে তাঁর উপরে হামলা হলেও কখনও বুঝতে পারিনি। সে দিনই সব টের পাই। খুবই লজ্জাজনক ঘটনা।’’

সীমাদেবীর স্বামী মুকেশ টুকটাক কাজ করে সংসার চালান। তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে এমন অবস্থায় পড়ার জন্য নিজের কপালকেই দুষছেন। তিনি জানান, ফলক জন্মানোর কিছুদিন পর থেকেই বাড়িতে স্ত্রীর উপরে অত্যাচার শুরু হয়। তবে, তাঁর সামনে কখনও হয়নি। পায়েলের জন্মের পর থেকে অত্যাচার বাড়ে। তিনি বলেন, ‘‘ভাবা যায়, ওরা তো শিশু। বাড়ির কেউ ওদের আদর করে না। না মা, না বোনেরা। ওরা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতেও বলেছিল।’’ শুক্রবার তিনটি শিশুই মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিল। তাদের নিয়ে যান সীমাদেবীর বাপেরবাড়ির লোকেরা। মামারবাড়িতে অবশ্য তাদের প্রচুর আদর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement