কুন্তীঘাটের কেশোরাম রেয়ন। ফাইল চিত্র।
হকের পাওনা। কিন্তু অবসরের পরে দিনের পরে দিন পেরিয়ে গেলেও গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছিলেন না হুগলির কুন্তীঘাটের কেশোরাম রেয়ন কারখানার অনেক শ্রমিক। ফল মিলল শ্রমিকদের একাংশ শ্রম দফতরে মামলা করার পরে। সম্প্রতি গ্র্যাচুইটির টাকা পেয়েছেন চারশোর বেশি শ্রমিক। ওই খাতে সব মিলিয়ে ১৬ কোটির বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে কারখানার তরফে।
কাঠখড় পুড়িয়ে ন্যায্য টাকা হাতে পেয়ে অবসরপ্রাপ্ত ওই সব শ্রমিকরা খুশি। তবে, অনেকের অভিযোগ, ওই টাকা দিতে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আইন অনুযায়ী ১০% সুদ দেওয়ার কথা। কর্তৃপক্ষ আসল দিয়েছেন। সুদ দেননি।
কারখানার ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রদীপকুমার দত্ত জানান, মোট ৪৪৩ জন শ্রমিককে গ্র্যাচুইটির টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই টাকার মোট অঙ্ক ১৬ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা।
টাকা মেটাতে দেরি কেন?
এই প্রশ্নের জবাবে ওই কারখানা-কর্তার দাবি, ‘‘দেরি বেশি হয়নি। এক-দেড় বছর হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির জন্য নানা সমস্যা হয়েছে। সে জন্যই একটু দেরি হয়েছে।’’
শ্রমিকেরা জানান, ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে গ্র্যাচুইটির টাকা বকেয়া ছিল। গ্র্যাচুইটি বাবদ কত টাকা পাওনা, অবসরের সময় শ্রমিকদের তা লিখিত ভাবে জানানো হলেও তা দেওয়া হচ্ছিল না। কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কাজ না হওয়ায় শ্রমিকদের একাংশ চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন।
ওই সংস্থার সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, অবসরের এক মাসের মধ্যে শ্রমিকের গ্র্যাচুইটির টাকা মেটানোর কথা। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। শ্রমিকদের নথিপত্র ঘেঁটে দেখে তাঁদের গ্র্যাচুইটির টাকা সুদ-সহ দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কেশোরাম রেয়ন কর্তৃপক্ষকে গত ১০ মে চিঠি দেওয়া হয় আইন সহায়তা কেন্দ্রের তরফে। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের জন্য চন্দননগরের যুগ্ম শ্রম কমিশনার কল্লোল চক্রবর্তীকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই সংস্থার মাধ্যমে ৮ জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক চুঁচুড়া শ্রম দফতরে মামলা করেন।
শ্রম দফতর এক আধিকারিক জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। দিন কয়েক আগে গ্র্যাচুইটির বকেয়া টাকা শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘আগে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হলেও শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ভয় পেতেন। এখন অনেক কারখানাতেই শ্রমিকেরা সাহস করে এগিয়ে আসছেন। আইনি পথে তাঁদের জয় হচ্ছে। এই কারখানার ক্ষেত্রেও সেটাই দেখা গেল।’’