হুগলিতে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতেই আসন বেড়েছে। প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে রণকৌশল ঠিক করতে শুরু করেছে নানা দল। পুনর্বিন্যাসে হুগলিতে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতেই আসন বেড়েছে। তাতে রাজনৈতিক দলগুলির কতটা সুবিধা হবে? সব আসনে প্রার্থী জোগাতে পারবে তারা? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরছে। উল্লেখযোগ্য সংরক্ষণের মধ্যে জেলা পরিষদের সভাধিপতির পদ তফসিলি হয়েছে। এটি সাধারণ ছিল।
ইদানীং রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে চর্চিত শব্দ ‘দুর্নীতি’। আসন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনাতেও ঘুরেফিরে সে কথা উঠছে শাসক-বিরোধী সব পক্ষের মুখে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সে কথা ঠারেঠোরে শাসক দল স্বীকারও করে। তবে, এ বার পরিস্থিতি ‘কঠিন’ বলে জোড়াফুল শিবিরেরই অনেকের ধারণা।
আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুস সুকুর বলেন, ‘‘নিয়মের মধ্যেই আসন বেড়েছে। চাকরি কেলেঙ্কারির আবহে বিরোধীরা সর্বত্র প্রার্থী দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের কর্মীরা কিছুটা হতোদ্যম।’’ খানাকুলের ধান্যগোড়ির উপপ্রধান দিলীপ সানকির মতো কিছু নেতা বলছেন, ‘‘একে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, তায় দুর্নীতিগ্রস্তদের দল প্রশ্রয় দেওয়ায় সিপিএম-বিজেপির সুবিধা।’’ দলের একাংশের বক্তব্য, আসন বৃদ্ধিতে বেশি লোক ভোটে দাঁড়াতে পারবেন। প্রার্থিপদ নিয়ে গোলমাল কিছুটা কমবে। তাতেও ‘খেয়োখেয়ি’ কতটা আটকাবে, প্রশ্ন দলেই।
গত বিধানসভা নির্বাচন থেকে বিজেপির ভোট কমেছে। দলের নেতাকর্মীদের অবশ্য বিশ্লেষণ, বিভিন্ন দুর্নীতিতে তৃণমূল যে ভাবে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়েছে, তৃণমূল সম্পর্কে জনমানসে প্রতিক্রিয়া বিরূপ। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, যুবনেতা কুন্তল ঘোষ নিয়োগ-দুর্নীতি কান্ডে হাজতে। দু’জনকেই বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে, এমন জনপ্রতিনিধিও আছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির পঞ্চায়েত স্তরের নেতা থেকে বিধায়ক বিমান ঘোষ বা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় সকলেরই দাবি, সমস্ত বুথে প্রার্থী হওয়ার জন্য একাধিক নাম তৈরি।
লকেটের বক্তব্য, ‘‘আমাদের প্রার্থী বাছাই করতে সময় লাগবে। তৃণমূলের মতো চোর-ছ্যাঁচোড়কে তো প্রার্থী করা যাবে না। আসন বাড়লেও কোনও অসুবিধা নেই। বহু মানুষ বিজেপির প্রার্থী হতে চাইছেন। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে মানুষ।’’ সাংগঠনিক দুর্বলতা খুঁজে বের করে ধারাবাহিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালি করার কাজ এগিয়েছে বলে হুগলির পদ্ম-সাংসদের দাবি।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, মানুষের স্বার্থে আসন বৃদ্ধি ভাল। তাঁর কথায়, ‘‘প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কোথাও কোনও সমস্যা নেই।’’ বিরোধীদের অনেকেই অবশ্য পুলিশকে কাজে লাগিয়ে শাসকের সন্ত্রাসের আশঙ্কার কথা শুনিয়ে রাখছেন।
বিরোধীদের আশঙ্কা উড়িয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক দিলীপ যাদব বলছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই দিয়েছেন, সুষ্ঠু এবং অবাধ ভোট হবে।’’ রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের সর্বত্র সংগঠন আছে। প্রার্থী দিতে কোনও সমস্যা নেই। বিরোধীদের কিন্তু তৃণমূল স্তরে সংগঠন নেই। ওরা ইডি, সিবিআই আর টিভি চ্যানেলে আছে। ওরা সর্বত্র প্রার্থী দিতে পারবে না।’’