প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে যেতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। প্রতীকী চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও হাওড়ায় জমি-জটে আটকে গিয়েছে ১০০ শয্যার আইসিইউ হাসপাতাল তৈরির কাজ। পাশাপাশি, রাজ্য টাকা মঞ্জুর না করায় থমকে গিয়েছে জেলায় উন্নত মানের পরীক্ষাগার নির্মাণের কাজও। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কেন্দ্রের সুস্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে পাওয়া প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ফেরত যেতে বসেছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের মার্চে রাজ্য সরকার জেলাগুলিতে ২৩টি ডিস্ট্রিক্ট ইন্টিগ্রেটেড পাবলিক হেল্থ ল্যাবরেটরি (ডিআইপিএইচএল) এবং ১০০ শয্যার ২২টিক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লক (সিসিবি) তৈরির জন্য কেন্দ্রের থেকে অনুমোদন পায়। যে সব জেলাহাসপাতালের আওতায় এই দু’টি প্রকল্প হওয়ার কথা, তার মধ্যে হাওড়া জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে ১০০ শয্যার সিসিবি এবং ডিআইপিএইচএল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য স্বাস্থ্যদফতর। বাকি যে জেলাগুলিতে ১০০ শয্যার সিসিবি হবে সেগুলি হল, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর,পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়ি। এ ছাড়া, ৫০টি শয্যার সিসিবি হওয়ার কথাদক্ষিণ দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার ও ঝাড়গ্রামে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই দু’টি প্রকল্প তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকেরপ্রতিনিধিরা হাওড়া জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে গিয়েছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই হাসপাতালের নতুন ভবনের তেতলার ছাদে চার হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে তৈরি হবে ডিআইপিএইচএল। প্রকল্পটি মঞ্জুরও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের থেকে প্রাথমিক পরিকাঠামো গড়ার জন্য এক কোটি টাকা না আসায় কাজ শুরু করা যায়নি।
অন্য দিকে, ১০০ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিবি করার মতো জায়গা হাওড়া জেলা হাসপাতালে না থাকায় কেন্দ্রীয় দল পাশেই কোনও জায়গায় প্রকল্পটি করার পরামর্শ দেয়। সেই মতো জেলা স্বাস্থ্য দফতর হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলো ও কার্যালয়ের পাশে, রাজ্য সরকারের একটি জমি নির্বাচন করে। আসল ডিপো অন্যত্র হলেও প্রায় আট হাজারবর্গমিটার জায়গা জুড়ে থাকা ওই জমিটি বতর্মানে পুরনো, ভাঙাচোরা বাস রাখার গুদাম হিসাবেব্যবহার করে রাজ্য পরিবহণ দফতর। সেখানে বৈদ্যুতিক বাসের একটি চার্জিং স্টেশনও রয়েছে এখন।
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই জায়গাটির জন্য আমরা স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছিলাম। তিনিও জায়গাটি চেয়ে পরিবহণ সচিবকে চিঠি দেন। কিন্তু তার পরেও ওই জমি আমাদের দেওয়া হয়নি। হাওড়া পুরসভার পক্ষ থেকেও পরিবহণ দফতরে জানানো হয়েছিল, বাসের চার্জিং স্টেশনের জন্য প্রয়োজনে পুরসভা অন্য জমি দেবে। কিন্তু তাতেও কিছু লাভ হয়নি।’’
হাওড়ায় ১০০ শয্যার সিসিবি করার জন্য চিহ্নিত জমিটি পরিবহণ দফতর আটকে রেখেছে, এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও পৌঁছে যায় বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি শুনে সঙ্গে সঙ্গে ওই জমিতেই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লক করতে হবে জানিয়ে নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরেও ওই জমি নিয়ে আজ পর্যন্ত রাজ্যপরিবহণ দফতর থেকে সবুজ সঙ্কেত আসেনি বলে অভিযোগ। ফলে, প্রায় ছ’মাস ধরে থমকে রয়েছে গোটা প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ অন্য জেলায় শুরুহয়ে গিয়েছে।
রাজ্য পরিবহণ দফতরের তরফে হাওড়ার এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘ওই ডিপোয় আগামী দিনেব্যাটারিচালিত বাসের জন্য বড় চার্জিং স্টেশন তৈরি করা হবে। এর জন্য বিকল্প কোনও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসনকে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’