গত সোমবার কালবৈশাখী ঝড়ে নৌকা উল্টে ডুবে গিয়েছিলেন ন’জন শ্রমিক। প্রতীকী ছবি।
গঙ্গার চর থেকে বালি তুলতে গিয়ে গত সোমবার কালবৈশাখী ঝড়ে নৌকা উল্টে ডুবে গিয়েছিলেন ন’জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে ছ’জন কোনও মতে পাড়ে উঠলেও ভেসে যান তিন জন। যাঁদের মধ্যে এক জনের মৃতদেহ মিললেও বাকি দু’জন এখনও নিখোঁজ। ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার নাজিরগঞ্জের কাছে মানিকপুর চরে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, সামান্য পারিশ্রমিকের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গঙ্গা থেকে বালি তুলতে যাওয়া ওই শ্রমিকদের আত্মীয়েরা নাজিরগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি, উল্টে অবৈধ বালি খাদানের মাফিয়ারা দলবল বেঁধে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে তাঁদের এলাকাছাড়া করেছে। নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজার চেষ্টা হলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই তাঁদের আত্মীয়েরা এখন নিজেরাই প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হুগলির খানাকুল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতো গত সোমবারও বড় একটি নৌকায় চেপে সাঁকরাইলের মানিকপুর চর থেকে বালি তুলতে বেরিয়েছিলেন ন’জন শ্রমিক। বালি বোঝাই করার পরে নিজেদের মোবাইলে নৌকার ছবিও তোলেন তাঁরা। এর পরে সন্ধ্যায় ওই নৌকা নিয়ে তাঁরা যখন নাজিরগঞ্জের পোদরার উদ্দেশে বেরোন, তখনই ঝড় ওঠে। নৌকা উল্টে গঙ্গায় তলিয়ে যান ন’জন শ্রমিকই। পরে তাঁদের মধ্যে ছ’জন কোনও মতে পাড়ে উঠলেও তিন জনের খোঁজ মেলেনি। বুধবার তাঁদের মধ্যে এক জন, সমিত দলুইয়ের মৃতদেহ বজবজের চরে পাওয়া গিয়েছে। বাকি দুই যুবক, সুরজিৎ সর্দার ও অমিত দলুইয়ের খোঁজ মেলেনি। সুরজিতের বাড়ি হুগলির খানাকুলের কাবিলপুরে। অমিতের হাওড়ার আমতায়।
অভিযোগ, ঘটনার পরদিন নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধানে বেরোনোর পর থেকেই তাঁদের পরিজনদের হয়রানি শুরু হয়। তাঁদের দাবি, পুলিশের সাহায্য চাইতে নাজিরগঞ্জ ফাঁড়িতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে তাদের কলকাতা রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাতে বলে। তবে, পরিজনেরা সেখানে না গিয়ে নিজেরাই নৌকা ভাড়া করে গঙ্গায় নিখোঁজ যুবকদের খোঁজে বেরোন। শেষে কাউকে না পেয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে তাঁরা খানাকুল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
নিখোঁজ সুরজিতের মামা সতীশ সাঁতরার অভিযোগ, বুধবার গঙ্গায় খোঁজাখুঁজি করার পরে যাঁদের ঘিরে ধরে। এর পরে তাঁদের জোর করে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে সাদা পাতায় সই করিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়ে বলে, ‘‘কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবি, ওরা ওই নৌকায় মাছ ধরতে গিয়েছিল। ঝড়ে উল্টে গেছে। নদী থেকে বালি তোলার কথা বললে গুলি করে মেরে ফেলব।’’ সে দিনের এই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবারও কেঁপে ওঠেন সতীশ। বলেন, ‘‘তখন মনে হচ্ছিল, প্রাণ নিয়ে আর বাড়ি ফিরতে পারব না। আমরা তার পর থেকে বাড়ি ফিরতে পারিনি। অবৈধ বালি খাদানের মাফিয়া বাহিনী আমাদের পিছনে লেগেছে। স্রেফ ভাগ্নের খোঁজ করছি বলেই যে কোনও সময়ে খুন হয়ে যেতে পারি।’’
এ বিষয়ে আরামবাগের এসডিপিও অভিষেক মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাওড়ার গঙ্গায় নৌকা ডুবে ছেলে সুরজিৎ সর্দার নিখোঁজ বলে খানাকুলের কাবিলপুরের কানাই সর্দার নামে এক জন অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা খোঁজ চালাচ্ছি।’’ নাজিরগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের অভিযোগ না নেওয়া প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘নদীতে দুর্ঘটনা ঘটলে সাধারণত কলকাতা পুলিশ মামলা দায়ের করে তল্লাশি চালায়। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, খতিয়ে দেখতে হবে।’’