Hooghly

২০০ বছরেরও বেশি সময় এই সমাধিতেই ঘুমিয়ে ‘সাত স্বামীর হত্যাকারী’ ওলন্দাজ সুন্দরী

চুঁচুড়ার খাদিনামোড় ও তালডাঙার মাঝে জিটি রোডের পাশে আজও রয়েছে তাঁর সমাধি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:০১
Share:

অবসরে সুসানার প্রিয় ঘোরার জায়গা ছিল আয়েশবাগ। নিজস্ব চিত্র।

ডাচ উপনিবেশ চুঁচুড়ার এক নারীর জীবনের উপর ভিত্তি করে সাহিত্যিক রাস্কিন বন্ড লিখেছিলেন ‘‘সুসানাস সেভেন হাসব্যান্ডস’’। সেই কাহিনি অবলম্বনে ২০১১ সালে বিশাল ভরদ্বাজ ‘‘সাত খুন মাফ’’ ছবি তৈরি করেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনয় করেন মূল চরিত্রে।

Advertisement

যাঁর জীবন থেকে তৈরি ছবি, সেই ওলন্দাজ মহিলার নাম ছিল সুসানা আন্না মারিয়া। চুঁচুড়ার খাদিনামোড় ও তালডাঙার মাঝে জিটি রোডের পাশে আজও রয়েছে তাঁর সমাধি।

১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সমাধির উপর তৈরি হয় স্মৃতি সৌধ। যা ‘৭ সাহেবের বিবির গোর’ নামে পরিচিত। শোনা যায়, সুসানার ৭ জন স্বামী ছিলেন। তাই ৭ সাহেবের বিবি নামে সুসানার পরিচিতি ছিল। যদিও তার কোনও প্রামাণ্য নথি পাওয়া যায় না। লন্ডনে ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ড অনুযায়ী যদিও সুসানার দু’জন স্বামী ছিলেন। প্রথমে বাংলার ডাচ ডিরেক্টর পিটার ব্রুয়েস, পরে ইংরেজ ব্যবসায়ী থমাস ইয়েটসকে তিনি বিয়ে করেন। জানা যায়, সম্ভ্রান্ত সুসানা যেমন সুন্দরী ছিলেন, তেমনই ছিলেন ব্যক্তিত্বময়ী। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, আয়েশবাগে তাকে সমাহিত করা হয়।

Advertisement

আয়েশবাগে সৌধটি ‘রানি আন্না মারিয়ার কবর’ নামেও পরিচিত। নিজস্ব চিত্র।

অবসরে সুসানার প্রিয় বাগান ছিল আয়েশবাগ। এই আয়েশবাগই এলাকার ইংরেজ ও ওলন্দাজদের কবরস্থান হিসেবে বিবেচ্য হবে বলে তিনি উইল করে যান। যদিও তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। সুসানার মৃত্যুর সময়েই চুঁচুড়া মিয়ারবেড়ে ডাচ সমাধিস্থানের গোড়াপত্তন হয়। ইতিহাস গবেষক প্রত্যুষ রায় বলেন, ‘‘সুসানার জীবদ্দশায় তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুব একটা বেশি জানা না গেলেও প্রচলিত জনশ্রুতি রয়েছে যে, উনি দানধ্যান করতেন। পাশাপাশি, তাঁর উইল থেকে জানা যায়, মোট ৪ হাজার টাকা তিনি রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর নিজের ও স্বামীদের সমাধিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। সম্পত্তির মধ্যে উদ্বৃত্ত অর্থ দরিদ্রদের দান করার জন্য বরাদ্দ ছিল।’’

ঐতিহাসিকদের মতে এই কাজের জন্য স্থানীয় ভারতীয়দের মধ্যে সুসানা ‘রানিমা’ নামেও পরিচিত হন। তাই আয়েশবাগে সৌধটি ‘রানি আন্না মারিয়ার কবর’ নামেও পরিচিত। তবে ইতিহাস ও যাবতীয় দস্তাবেজ যাই বলুক, আন্না মারিয়ার চরিত্রটি রহস্যময় হয়ে উঠেছে তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা লোককথা নিয়ে। প্রমাণ না মিললেও সেগুলি জনশ্রুতি হিসেবে রয়ে গেছে। এমনটা দাবি করা হয় যে সুসানা ৭ বার বিয়ে করেছিলেন আর বিয়ের পর প্রতিবার তাঁর স্বামী রহস্যজনকভাবে অন্তর্হিত হয়েছিলেন। সুসানাকে তাঁর স্বামীদের হত্যাকারী বলে চিহ্নিত করা হলেও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত চারদিক খোল তাঁর সমাধিসৌধটি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যের নিদর্শন। ৪ দিক থেকে সিঁড়ি উঠে গিয়েছে সৌধটিকে ঘিরে। স্মৃতিসৌধটির মাথায় ইউরোপীয় ধাঁচের এক অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ ও তার মাথায় একটি চূড়া রয়েছে। গঠনের জন্য সৌধটিকে ডাচ-মন্দির হিসেবেও চেনেন অনেকে। চূড়ার মাথায় ডাচ ভাষায় খোদাই করে লেখা সুসানার নাম ।

অভিযোগ, আন্না মারিয়ার স্মৃতিসৌধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও স্থানীয়দের উৎসাহ সেই ভাবে চোখে পড়ে না। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা কেন্দ্রীয় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) এই সৌধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই অসামাজিক কাজকর্ম হয়। ইতিহাসপ্রেমীদের আরও আক্ষেপ, দিনে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও রাতে এখানে কোনও আলোর ব্যবস্থাই নেই। ফটোশ্যুট করতে বা ঘুরতে অনেকেই আসেন এই স্মৃতিসৌধে, তবে তাঁদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন পুরাতাত্ত্বিকরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement