চুঁচুড়ায় আরএসপি-র সেই কার্যালয়ের তালা খুলছেন তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।
দুই দলের মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। রাজনীতিতে তারা একে অপরের বিরোধী। কিন্তু সেই দলীয় মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে সমস্যায় পড়া আরএসপি দলের পাশে দাঁড়ালেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। দখল হওয়া আরএসপি-র দলীয় কার্যালয় পুনরুদ্ধার করে তাদের হাতেই তুলে দিলেন বিধায়ক।
হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাধবীতলা ব্যরাক রোডে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আরএসপি-র এই কার্যালয়। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন বৈঠক হত এই কার্যালয়ে। মাস্টারদা সূর্য সেনও এই কার্যালয়ে এসেছিলেন। এক সময়ে অনুশীলন সমিতির কার্যালয় ছিল এটি। এই কার্যালয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু দস্তাবেজ সংরক্ষিত আছে।
আরএসপি-র এই কার্যালয়ের পাশেই রয়েছে একটি মদের দোকান। সেই দোকানের মালিক নরেশচন্দ্র ঘোষ বর্তমানে ওই আরএসপি কার্যালয়ের মালিক। অভিযোগ, নরেশচন্দ্রই গত ৩ জুন রাতে ওই কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে পাঁচিল তুলে দেন। বিষয়টি দেখামাত্রই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন আরএসপির হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কিশোর সিংহ। বিষয়টি এলাকার বিধায়ককেও জানান।
সেই অভিযোগ পেয়ে আরএসপি-র কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বিধায়ক অসিত। সেখানে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর নরেশচন্দ্রকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন এই কার্যালয় বন্ধ করা হল। নরেশ তখন পাল্টা অভিযোগ করেন, ২০১৪ সাল থেকে এই ঘরের ভাড়া পাচ্ছিলেন না তিনি। এমনকি আরএসপি নেতৃত্বকে বলা হয়েছিল ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। এটা সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সে কথা শোনা হয়নি। এর পরই ঘরের সামনে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়।
বিধায়ক জানান, জোর করে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। আরএসপি তৃণমূলের বিরোধী দল হলেও তাদের সঙ্গেও যদি অন্যায় হয়, তা বরদাস্ত করা হবে না। কিছু সমস্যা থাকলে তার জন্য আইন আছে। বিধায়কের সঙ্গে কথা বলার পর নরেশ জানিয়েছিলেন, তিনি পাঁচিল ভেঙে দেবেন। বৃহস্পতিবার সেই পাঁচিল ভেঙে আরএসপি নেতৃত্বের হাতে সেই কার্যালয় তুলে দিলেন বিধায়ক। তিনি নিজেই তালা খুলে আরএসপি-র নেতাদের কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেন। কিছু ক্ষণ সেখানে বসেন তিনি।
সেই কার্যালয়ে তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।
বিধায়ক বলেন, “আমি একটা প্রতীক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম ভোটে। চুঁচুড়ার মানুষ আমাকে আশীর্বাদ করেছেন। আমার কাছে কোনও দল-ধর্ম-জাতি-বর্ণ নেই। মানুষের সেবা করাই আমার কাজ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আমার কাজ। আরএসপি, সিপিএ, বিজেপি বা তৃণমূল যাদের বিরুদ্ধেই অন্যায় হবে, সেখানেই প্রতিবাদ করব। যাঁর যে দল ভাল লাগবে করবে। প্রত্যেকেরই অধিকার আছে স্বাধীনভাবে কোনও দল করার। আমি আগের দিন বলে গিয়েছিলাম ওঁরা পাঁচিল খুলে দিয়েছেন।”
আরএসপি নেতা কিশোর সিংহ বলেন, “আমরা দেখি বিধায়করা সাধারণত দলের বিধায়ক হন। অসিতবাবু সেই প্রথা ভেঙে দিলেন। তিনি চুঁচুড়ার সব মানুষের বিধায়ক তা প্রমাণ করলেন। সত্যের যে জয় আছে তা বোঝা গেল। ধন্যবাদ বিধায়ককে।”