dacoity

অনলাইনে গ্রাহকদের রেটিং দেখে ডাকাতির ছক, হুগলির তিন ডাকাতকে যাবজ্জীবন দিল আদালত

ডাকাতদের তিন জনকে খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, ডাকাতির সময় মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার, অস্ত্র আইন-সহ নানা ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার কড়া নিরাপত্তা ছিল আদালতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩ ১৬:৩৯
Share:

আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অপরাধীদের। — নিজস্ব চিত্র।

হুগলির চন্দননগরে স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থার দফতর থেকে সোনা লুট এবং পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াই চালানোর অভিযোগে সোমবার তিন ডাকাতকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালতের বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ দোষীদের তিন জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন। তাদের খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, ডাকাতির সময় মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার, অস্ত্র আইন-সহ নানা ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের জ্যাকি নামে এক জন এই চক্রটি পরিচালনা করে। সেই কারণে যাতায়াতের সময় কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় আদালত চত্বর।

Advertisement

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে এক স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতি চালায় বিট্টু কুমার ওরফে করণ, গুড্ডু কুমার ওরফে ধর্মেন্দ্র এবং বিট্টু কুমার ওরফে ছোট্টু নামে তিন জন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ডাকাতরা পোর্টেবেল জ্যামার এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিটেক্টর (আরএফআইডি) ব্যবহার করে ওই সংস্থার বিপদঘণ্টি বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই কারণে ডাকাতির সময় যোগাযোগে সমস্যা হয় পুলিশেরও। এর পর ডাকাতরা গ্রাহক সেজে ওই সংস্থায় ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুটপাট চালায়। পালানোর সময় ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও চালায় তারা। ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। এক জন পালিয়ে যায়। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ডাকাতির ঘটনায় চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী আধিকারিক অতনু মাঝি। তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় ওই চক্রটির অন্য সদস্যেরা। আদালতে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া। তাতে পুলিশ অধিকারিক, সংস্থাটির কর্মী, প্রত্যক্ষদর্শী, ফরেন্সিক এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ-সহ মোট ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সোমবার আদালত ধৃতদের দোষী সাব্যস্ত করে। মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা।

সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দোষীরা বৈদ্যুতিন যন্ত্র ব্যবহার করে ডাকাতি করেছিল। সেই সংক্রান্ত একাধিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ডাকাতির সময় পোর্টেবল জ্যামার, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিটেক্টর (আরএফআইডি) ব্যবহার করেছিল তারা। জিপিএস ট্র্যাকারের সাহায্যে তারা সোনা নিয়ে যাওয়ার গাড়ির সন্ধান চালাত। ডাকাতির দিন জ্যামার ব্যবহার করায় ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে ওই সংস্থার সিসি ক্যামেরা চালু ছিল। স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থাটির সদর দফতর বিশাখাপত্তনমে। সেখান থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঘটনার সময় লাইভ ফুটেজ দেখে চন্দননগরের দফতরে ফোন করা হয়। সেখানে কাউকে না পেয়ে রিজিওনাল ম্যানেজারকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। এর পর রিজিওনাল ম্যানেজার চন্দননগর পুলিশের হেল্পলাইনে ফোন করে ডাকাতির কথা জানান।’’

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের বৈশালী, সোনপুর এবং শেখপুরা এলাকার বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতীরা শিক্ষিত। কলেজ পড়ুয়া ওই দুষ্কৃতীরা প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। মূলত স্বর্ণ ঋণ সংস্থায় ডাকাতি করত তারা। ডাকাতির আগে গ্রাহকদের রেটিং অনলাইনে দেখে নিত তারা। তা দেখে তারা আন্দাজ করত ওই সংস্থায় কতটা সোনা পাওয়া যেতে পারে। এর পর তারা ছক কষে ডাকাতি করত। আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গায় একই ভাবে ডাকাতি করে তারা। চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে ডাকাতি করার আগে তারা ওই সংস্থার দফতরে গিয়ে রেইকিও করে দু’বার। দোষীদের মধ্যে বিট্টু কুমার ওরফে ছোট্টু ব্যারাকপুরে মণীশ শুক্লা খুনেও অভিযুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে, সেই ঘটনায় ছোট্টু ছিল শার্প শুটার। আসানসোলে ডাকাতি করে সে পেয়েছিল ১৮ লক্ষ টাকা। করণের বিরুদ্ধে বিহারে এটিএম-এর ক্যাশ গাড়ি লুট এবং খুনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গুড্ডুর বিরুদ্ধে হরিয়ানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালতে সাজা ঘোষণার পর সাংবাদিক বৈঠক করা হয় চন্দননগর পুলিশের তরফে। পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি,বলেন, ‘‘এই ডাকাত দলটি বহু জায়গায় এমন ধরনের অপরাধ ঘটিয়েছে। চন্দননগরের ঘটনার পর আমাদের দায়িত্বশীল আধিকারিকরা সেই দুষ্কৃতীদের ধরেছে। অতনু মাঝি এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক। তিনি জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়েছেন। তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের ওই চক্রটির থেকে ৭০ রাউন্ড কার্তুজ, সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র,পাঁচটি ম্যাগাজিন, পোর্টেবল জ্যামার, বৈদ্যুতিন সামগ্রী, মোবাইল, দু’টি বাইক, নগদ টাকা এবং সোনা উদ্ধার হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement