পথশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধনে মন্ত্রী পুলক রায়। মঙ্গলবার বাহিরায়। নিজস্ব চিত্র।
এই প্রথম পিচ পড়ছে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বহিরা পঞ্চায়েতের ভেটপোতা থেকে ছোট আমসা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ৭০০ মিটার লম্বা কাঁচা রাস্তাটিতে। মঙ্গলবার কাজ শুরু হতেই গ্রামবাসীরা দেখতে ভিড় জমান। তাঁদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ এ বার মিটতে চলেছে।
এ দিন হুগলির সিঙ্গুর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে রাজ্যে যে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তার কাজের সূচনা করলেন, তার মধ্যে রয়েছে বহিরা পঞ্চায়েতের ওই রাস্তাটিও। সেখানে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজটি চালু করেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তাটি হলে ধুলাসিমলা, বহিরা এবং তপনা পঞ্চায়েতের প্রায় ১০ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন।’’
রাস্তাটি করছে জেলা পরিষদ। তারা জানিয়েছে, এ জন্য জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৮৭ লক্ষ টাকা। যে ঠিকা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এই কাজে ১০০ দিনের প্রকল্পের জবকার্ডধারীদের নিয়োগ করা হচ্ছে।
বহিরার ওই এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা পান ও আনাজ চাষের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু রাস্তার অভাবে ফসল বাজারে নিয়ে যেতে তাঁদের বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়। বিশেষ করে বর্ষায় মাটির রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়লে তাঁরা নাকানি-চোবানি খান। ছোট আমসায় যেখানে রাস্তাটিশেষ হচ্ছে, তার পাশে কাশমুল গ্রাম। এটি তপনা পঞ্চায়েতের অধীন। এই গ্রামের বাসিন্দাদেরও বেশ সুবিধা হবে রাস্তাটি হলে।
কাশমুলের বাসিন্দা লাল মহম্মদ মোল্লা বলেন, ‘‘এখন উলুবেড়িয়া যেতে হলে ললিতাগড়ি, বীরশিবপুর হয়ে ঘুরে যেতে হয়। বহিরার ওই রাস্তাটি হয়ে গেলে অনেক কম সময়ে আমরা ভেটপোতা হয়ে উলুবেড়িয়া যেতে পারব।’’ একই মন্তব্য এই গ্রামেরই বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত বাগেরও।
বহিরা ও তপনা পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ রাস্তা ঢালাই হয়ে গেলেও কেন এতদিন এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি করা হয়নি? স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’টি পঞ্চায়েতই তৃণমূল পরিচালিত। কিন্ত যেহেতু দু’টি পঞ্চায়েতের সীমানা এলাকায় রাস্তার কিছু অংশ পড়ে, তাই দুই পঞ্চায়েতই দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা ‘আইপ্যাক’-এর মধ্যস্থতায় এই রাস্তাটি ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে পিচঢালা করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
দু’টি পঞ্চায়েতের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই যে কাজটি এতদিন হয়নি, সেই অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূলের পক্ষ থেকে বহিরা ও তপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক আকবর শেখ। তিনি বলেন, ‘‘টাকার অভাবেই এতদিন রাস্তা তৈরি হয়নি। পথশ্রী প্রকল্পে টাকার সংস্থান হওয়ায় রাস্তাটি করার সিদ্ধান্ত হয়।’’
হাওড়ার জেলার বিভিন্ন রাস্তার কাজের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটি হয় এই বহিরায়। হাজির ছিলেন জেলাশাসক মুক্তা আর্যও। তিনি জানান, এ দিন জেলা জুড়ে ২৭২টি রাস্তার কাজ ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে শুরু হল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে প্রতিটি রাস্তার কাজে ১০০ দিনের প্রকল্পের জবকার্ডধারীদের কাজ দেওয়ার জন্য ঠিকা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।