আছে ক্লাসঘর, ফাঁকা বেঞ্চ। নিজস্ব চিত্র।
গোছানো ক্লাসঘর, স্কুলের সামনে সবুজ মাঠ। সকালবেলা শিক্ষকেরা এসে গিয়েছেন স্কুলে। সকাল তখন ১০টা। স্কুলের ঘণ্টা বাজল। কিন্তু পড়ুয়া দুই ছাত্রও যে স্কুলে আসেনি। ওরা আসে না। পড়ুয়াদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রোজ বাড়ি ফিরে যান শিক্ষকেরা। এ ভাবেই চলছে হুগলির আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর জুনিয়র হাই স্কুল।
নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে ২০১১ সালে শুরু হয় এই জুনিয়র হাইস্কুল গড়ার কাজ। পরের বছর থেকে শুরু হয় পড়াশোনা। প্রথম প্রথম পড়ুয়া সংখ্যা বেশ ভালই ছিল। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে কমতে শুরু করে পড়ুয়া। ওই বছর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সংখ্যা হয় ৭৩ জন। সাত বছরে কমতে কমতে এখন ছাত্র সংখ্যা ঠেকেছে দুইয়ে।
ওই এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য অনেকটা পথ পেরিয়ে বাতানল হাই স্কুল, বাতানল গার্লস স্কুল অথবা কড়ুই হাইস্কুলে যেতে হয়। সে জায়গায় বাড়ির পাশের স্কুলে কেন পড়তে আসছেন না?
স্কুলের টিচার ইন-চার্জ কবিতা হাজরা জানান, করোনার জন্য দু’বছর স্কুল বন্ধ ছিল। চলতি বছরে স্কুল খুলেছে। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীরা আসে না। মাত্র দু’জন ছাত্র স্কুলে আসত। তারাও অনুপস্থিত থাকে। দুই ছাত্রের মধ্যে এক জন সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। সূর্য মালিক নামে ওই ছাত্রের বাবা গাড়িচালক। দ্বিতীয় জন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। অতনু রায় নামে ওই পড়ুয়া এখন বাবার সঙ্গে সব্জি বিক্রি করে বাজারে। একাধিক বার শিক্ষক-শিক্ষিকারা দুই পড়ুয়ার বাড়িতে যান। তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু দুই পড়ুয়াকে আর স্কুলমুখী করা যায়নি। তাঁর দাবি, করোনা আবহে সব স্কুলেই পড়ুয়া কমছে। এখন পড়ুয়াদের ধরে রাখার একটা প্রতিযোগিতা চলছে স্কুলগুলির মধ্যে। সেই জায়গায় তাঁরা ব্যর্থ। কারণ, এখানে মোটে চারটে শ্রেণিকক্ষ। দু’জন মাত্র শিক্ষক।
এ নিয়ে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দীপক মাঝি বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। গ্রামবাসীরা চেয়েছিল বলেই না এই জুনিয়র হাইস্কুল তৈরি হয়েছিল।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘অভিভাবকরা চান, একই স্কুলেই যেন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বেরোতে পারে তাঁদের ছেলেমেয়েরা। তাই জুনিয়র হাইস্কুলগুলোর এই অবস্থা। তবুও আমরা চেষ্টা করব। অভিভাবকদের বোঝাব, যাতে গ্রামের যে স্কুল রয়েছে সেখানেই সন্তানদের ভর্তি করেন।’’