ছেলের ছবি হাতে মা। মৃত সুরম্য সাঁতরা (ইনসেটে)। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ।
রাজ্য জুড়ে তোলপাড় চলছে যাদবপুরের হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায়। উঠছে র্যাগিংয়ের অভিযোগ। গত মাসের ২৮ তারিখ ভোরে মৃত্যু হয়েছিল বিহারের সমস্তিপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুরম্য সাঁতরার। ওই ঘটনাতেও পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ জানালেন বাবা-মা। হুগলির বৈদ্যবাটী পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জগবন্ধু মুখার্জি লেনের বাসিন্দা সুরম্য পড়তেন দ্বিতীয় বর্ষে। তাঁর মা মনীষার আক্ষেপ, যাদবপুরের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ, বিহারে পড়তে গিয়ে তাঁর একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নিল না বিহার পুলিশ। মনীষা বলেন, "যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি হোক। মুখ্যমন্ত্রী যাতে এই বিষয়ে নজর দেন, সেই অনুরোধ করব।" তাঁর অভিযোগ, "বিহার সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের পিঠ বাঁচাতে চাইছে। তাই কিছু করছে না।"
পরিবার সূত্রের খবর, চলতি মাসের ১০ তারিখ সুরম্যের মা বিহার পুলিশের ডিজিপি, আইজি, এসপি ও আইসির কাছে মেল ও ডাক মারফত ছেলেকে খুনের অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সেখানকার পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই কিছু লুকোতে চাইছেন। হাসপাতালে ও ছাত্রাবাসে যেতে দেওয়া হয়নি পরিজনদের। মাঝরাস্তায় দেহ বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জায়গাটি হাসপাতাল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং দুর্ঘটনাস্থল অর্থাৎ ছাত্রাবাস থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। একাধিক বার চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বিহারে পুলিশের সাকরা থানার এক তদন্তকারী অফিসার বিবেকানন্দ ঝা বলেন, "ওই ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলার রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন সেখানে পরীক্ষা চলছে। তাই শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না।" বিবেকানন্দের অবশ্য দাবি, এখনও পর্যন্ত পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগপত্র মেলেনি।
২৮ জুলাই রাত ৩টে নাগাদ ছাত্রাবাস থেকে বাড়িতে ফোন করে ঘটনার খবর দেওয়া হয়। সুরম্যকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছাপড়ার প্রশান্ত মেমোরিয়াল চ্যারিটেবল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পটনায় পৌঁছে আত্মীয়েরা জানতে পারেন, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ। ৫টায় মৃত্যু হয় বছর কুড়ির যুবকের।
সুরম্যের বাবা প্রশান্ত জানান, স্ত্রী দিনরাত ছেলের ছবি নিয়ে কেঁদে চলেছেন। তিনি বলেন, "ছেলের মৃত্যুর দশ দিন পরে যাদবপুরের ঘটনা ঘটল। অভিযোগ পেয়ে কলকাতা পুলিশ যে তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শুরু করে দোষীদের গ্রেফতার করেছে, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না বিহার পুলিশের ক্ষেত্রে। আমি আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাব, যাতে বিহারে ছেলের মৃত্যুরহস্যের প্রকৃত তদন্ত হয়। এ জন্য বিহার সরকারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলুন, এই অনুরোধ।"