স্কুলের পথে একটি বটগাছের নীচে কান্না খুদেদের। বুধবার বলাগড়ের খোট্টাপাড়া প্রাথমিক স্কুল এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
অন্য স্কুলে বদলি হয়েছেন শিক্ষিকা। আর তিনি আসবেন না। তিনি স্কুল থেকে বেরোনোর পরে এই খবর পেয়ে কেঁদে ভাসাল খুদে ছাত্রছাত্রীরা। হুগলির বলাগড়ের দক্ষিণ গোপালপুরের খোট্টাপাড়া প্রাথমিক স্কুলে বুধবার এই দৃশ্যে চোখ ভিজল অভিভাবক থেকে শিক্ষকদেরও। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের রসায়ন স্বস্তি দিল শিক্ষা মহলকে।
তিন বছর এই স্কুলে চাকরি করেছেন রেশমা খাতুন নামে ওই শিক্ষিকা। এ বার তিনি নিজের জেলা মুর্শিদাবাদের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেবেন। আজ, বৃহস্পতিবার বলাগড়ের স্কুলটিতে তাঁর শেষ দিন।
বুধবার ওই শিক্ষিকা স্কুল থেকে বেরোনোর পরেই তাঁর বদলির বিষয়টি জানতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। প্রিয় শিক্ষিকা আর আসবেন না, সেই খবরে তাদের মধ্যে শোরগোল পড়ে। কেউ স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে থাকে। জনা পনেরো পড়ুয়া খানিক দূরের বটগাছের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। ফোঁপাতে ফোঁপাতে তৃতীয় শ্রেণির রিনঝা বলে, ‘‘ম্যাডাম আর আসবেন না।’’ বলেই ফের কান্না শুরু। অভিভাবকেরা সন্তানদের বোঝান, শিক্ষকদের চাকরি এ রকমই। ওই শিক্ষিকা ফের আসবেন বলে সান্ত্বনা দেন।
ফোনে রেশমা জানান, মুর্শিদাবাদের তাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি ‘মিউচুয়াল’ বদলি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, এলাকার মানুষ সকলেই ভাল। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেক সাহায্য করেছেন। নিজের সন্তানের মতো করে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছি। ছাত্রছাত্রীদের বলব, ওরা যেন অনেক বড় হয়।’’
প্রধান শিক্ষক হরেরাম দাস জানান, ওই শিক্ষিকার দুই সন্তান। তারা ছোট। তাদের জন্যই নিজের বাড়ির কাছের স্কুলে ‘মিউচুয়াল’ বদলি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে বৃহস্পতিবার ওঁর শেষ দিন। ওঁকে আগামী দিনের শুভেচ্ছা।’’ সমীর মণ্ডল নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘‘উনি (রেশমা) ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশেন। তিনি বাড়ি চলে যাবেন কেন ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে তা বুঝতে পারেনি। পরে বুঝতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।’’