নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার শান্তনু। — ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত বলাগড়ের যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তিনি ওই সংস্থার সোমরাবাজার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের কর্মী ছিলেন। ইতিমধ্যেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সোমরাবাজার কেন্দ্রটি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মগরা বিভাগের (ডিভিশন) অন্তর্গত। শান্তনুকেতাদের নৈহাটি বিভাগে বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বণ্টন সংস্থাটির অধিকর্তা (মানবসম্পদ) অভিজিৎকুমার লাটুয়া।
সংস্থা সূত্রের খবর, সাসপেন্ড করার পরে বিভাগীয় তদন্তের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার জন্য অভিযুক্ত কর্মীকে অন্য ডিভিশনে বদলি করাই রেওয়াজ। শান্তনুর সাসপেনশন গত ১০ মার্চ (ওই দিনই শান্তনু গ্রেফতার হন) থেকেই কার্যকর হবে। এর মধ্যে মূল বেতনের (বেসিক) ৭৫ শতাংশ পাওয়ার যোগ্য তিনি। তবে, সে জন্য তাঁকে নিয়ম অনুযায়ী, নৈহাটি ডিভিশনে কাজে যোগ দিয়ে, তা দাবি করতে হবে। কিন্তু শান্তনু এখন ইডি হেফাজতে রয়েছেন।
সংস্থা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জানুয়ারির মাঝামাঝির পর থেকে সোমরাবাজারের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে কর্মস্থলে হাজিরা খাতায় শান্তনুর উপস্থিতির সই নেই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রে হাজির না হয়ে পরে কোনও একসময়ে গিয়ে খাতায় সই করতেন বলে অভিযোগ। মূলত সেটি এবং সংস্থার কাছ থেকে নিয়ম মেনে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ছাড়পত্র না পেয়েও গতবার পঞ্চায়েতভোটে দাঁড়ানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে খবর।
সূত্রের খবর, শান্তনু সংস্থার কাছে ওই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন জানালেও তা মঞ্জুর হয়নি। সংস্থার নিয়ম, কোনও কর্মী কর্মরত অবস্থায় ভোটে লড়তে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়।
পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন কি সেই সময় ছাড়পত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখেছিল? এ প্রশ্নের জবাবে এক আধিকারিক জানান, বছর পাঁচেক আগের ঘটনা হঠাৎ করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর বিভিন্ন সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রোমোটারি ব্যবসাতেও নেমেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। তিনি চন্দননগরে আবাসন তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন। চন্দননগরের বাসিন্দা ইন্দ্রনীল চৌধুরী প্রোমোটার। বুধবার তিনি জানান, তিনি আর একজনের সঙ্গে প্রোমোটারি ব্যবসা করেন। ২০২০ সালে শান্তনুর সঙ্গে তাঁদের আলাপ হয়।
ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের ব্যবসায় তাঁর স্ত্রীকে অংশীদার করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। আমরা রাজি হয়ে যাই। সেই মতো চার লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন ওঁর স্ত্রী।’’ ইন্দ্রনীলআরও জানান, চন্দননগরের সত্যপিরতলায় সাড়ে ছ’কাঠা জমিতে তাঁদের যৌথ অংশীদারিত্বে একটি আবাসন তৈরির কাগজপত্র তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। আবাসনের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান।
ইন্দ্রনীলের আক্ষেপ, শান্তনু গ্রেফতার হওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে পরিচিতদের মধ্যে এখন আমাদের নানা কথা শুনতে হচ্ছে। বুঝতেপারছি, কত বড় ভুল করেছিলাম। ভবিষ্যতে কাউকে অংশীদার করার আগে ১০০ বার ভাবতে হবে।’’ প্রিয়াঙ্কার প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর মোবাইল ফোন বেজে গিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও জবাব মেলেনি।