প্রস্তুতি বৈঠকে গরহাজির রইলেন বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী।
এক সপ্তাহ পরে হুগলিতে তৃণমূলের সর্বভারতীর সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি। শুক্রবার বৈদ্যবাটীতে দলের প্রস্তুতি বৈঠকে গরহাজির রইলেন বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ব্যস্ত থাকলেন নিজের এলাকায় ওই কর্মসূচির প্রচারে। এ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে শাসক দলে।
দলে গুরুত্ব পাচ্ছেন না, সম্প্রতি এমন ক্ষোভ জানিয়েছেন মনোরঞ্জন। সেই ক্ষোভ থেকেই কি বৈদ্যবাটীর বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি?
বিধায়কের দাবি, ‘‘এ কথা ঠিক নয়। শরীর ভাল ছিল না। আর, এলাকায় আগেই বৈঠক ডেকেছিলাম। দলীয় নেতৃত্বের পরামর্শেই কর্মসূচি বাতিল করিনি। আগের বৈঠকে তো গিয়েছিলাম।’’ একই দাবি করে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁইন বলেন, ‘‘ওঁর গরহাজিরায় কোনও বার্তা নেই।’’
শুক্রবার কুন্তীঘাটে নবজোয়ারের সমর্থনে সভায় মনোরঞ্জন ছাড়াও ব্লকে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একাংশ বলছেন, কয়েক মাস আগে দলের ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দলের হস্তক্ষেপে টাকা ফেরাতে হয়। স্বচ্ছতার প্রশ্নে বিধায়ক তাঁর অপসারণ দাবিকরলেও কিছুই হয়নি। অঞ্চল সভাপতি ঠিক করা হয়েছে বিধায়কের বিনা পরামর্শে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা এ দিন দলীয় বৈঠক এড়িয়েছেন।
হুগলিতে অভিষেকের সফর ৫ থেকে ৭ জুন। শেষ দিন অধিবেশন এবং রাত্রিবাস বলাগড়ে। ঘটনা হচ্ছে, শনিবার কামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে (অভিষেকের অধিবেশনস্থল) ‘নবজোয়ার’ নিয়ে দলের জেলা যুব সভানেত্রী রুনা খাতুনের ডাকা সভাতেও বিধায়ককে দেখা যায়নি। দলের ব্লক সহ-সভাপতি তপন দাসের দাবি, বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সাড়া মেলেনি। বিধায়কের ‘কাছের’ নেতারাও আসেননি। আজ, সোমবার এই মাঠেই বিধায়ক বৈঠক ডেকেছেন বলে তৃণমূলের খবর।
অভিষেকের সভার আগে একাধিক নেতা মুখ বন্ধ রাখছেন। তবে, কথায় ক্ষোভ স্পষ্ট। বিধায়ক ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘অঞ্চল সভাপতি একতরফা ভাবে ঠিক করেছেন নবীনদা। নবজোয়ারের অধিবেশনে দলীয় ভোটে তো ওরাই প্রাধান্য পাবে। সার্বিক প্রতিফলন হবে না।’’
তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, দিন কয়েক আগে বিধায়ক ব্লক এবং অঞ্চল সভাপতি পদে নাম সুপারিশ করে দলের জেলা নেতৃত্বকে পাঠিয়েছেন। বিধায়কের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যা বলার, দলকে বলেছি। শুনবে কি না, দলের ব্যাপার। আমার কথা দলকে শুনতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই।’’ নবীন বলেন, ‘‘আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলুন।’’
অরিন্দমের বক্তব্য, বিধায়কের প্রস্তাব দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে। নবীনের বিষয়েও দলের ভাবনাচিন্তা রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, অধিবেশনে দলীয় ভোট থাকলেও মানুষের মত বেশি প্রাধান্য পাবে। মানুষ কাদের প্রার্থী চাইছেন, দলের কাছে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া, কারও কোনও বক্তব্য থাকলে কর্মসূচিতে সরাসরি, লিখিত ভাবে বা ফোনেও জানাতে পারবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই কর্মসূচি সফল করতে দলের সবাই এক হয়ে কাজ করছেন।’’
নেতৃত্ব যা-ই বলুন, ‘নবজোয়ারের’ আগে গোষ্ঠী বিভাজনের জেরে দলের তথাকথিত ঐক্যে যে ‘ভাটা’র টান, ঠারেঠোরে অনেকেই মেনে নিচ্ছেন।