মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক
Mundeswari River

Mundeswari river: মুণ্ডেশ্বরীতে হঠাৎ ড্রেজিং বন্ধ, হাওড়ার বন্যা নিয়ন্ত্রণে চিন্তা

বাসিন্দাদের আশঙ্কা, ড্রেজিং দ্রুত শেষ না হলে এখানে বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হবে না।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:২৬
Share:

পাড় ভাঙছে মুণ্ডেশ্বরীর। পুরশুড়া এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় পূর্ব বর্ধমানের কোটশিমূল থেকে বেগুয়াহানা (৫ কিমি) পর্যন্ত মুণ্ডেশ্বরী নদীতে ড্রে্জিংয়ের কাজ কয়েক মাস ধরে আচমকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার জেরে হাওড়ার দুই ব্লকের (উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২) বাসিন্দাদের আশঙ্কা, ড্রেজিং দ্রুত শেষ না হলে এখানে বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থায়ী ভাবে হাওড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা বানচাল হয়ে যেতে পারে।

Advertisement

হাওড়ায় কেন বন্যার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে?

সেচ দফতর সূত্রের খবর, ডিভিসি যে জল ছাড়ে, তা দামোদর দিয়ে এসে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কাছে বেগুয়াহানায় দু’টি ভাগ হয়। একটি ভাগ যায় মুণ্ডেশ্বরীতে। অন্যটি দামোদর দিয়েই এসে শ্যামপুরে গঙ্গায় মেশে। পলি জমে মুণ্ডেশ্বরীর নাব্যতা অনেকটা কমে গিয়েছে। ফলে, দামোদরে জল বেশি ঢোকে এবং তা হাওড়ায় ব‌ন্যা আনে। হাওড়ায় দামোদরের পশ্চিম দিককে যে হেতু ডিভিসি ‘স্পিল এলাকা’ বলে ঘোষণা করেছে, তাই এ দিকে নদীর পাড়ে কোনও বাঁধ নেই। আর এই পশ্চিম দিকেই উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ নম্বর ব্লকের সিংহভাগ এলাকা পড়ে। ফলে, ডিভিসি যখন অতিরিক্ত জল ছাড়ে তখন তা এই দু’টি ব্লককে ভাসিয়ে দেয়। গত বছরেও ডিভিসি-র ছাড়া জলে দু’বার এই এলাকায় বন্যা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ।

Advertisement

বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্পেও দামোদরের পশ্চিম দিকে বাঁধ নির্মাণের কোনও পরিকল্পনা করা হয়নি। তা হলে হাওড়ার দুই ব্লকে বন্যার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে কী ভাবে?

সেচ দফতর পরিকল্পনা করে, বেগুয়াহানায় যেখানে দামোদর ভাগ হয়েছে, সেখান থেকে মুণ্ডেশ্বরীর ১৯ কিলোমিটার অংশে ছ’ফুট গভীর করে ড্রেজিং করা হবে। ফলে, মুণ্ডেশ্বরী তুলনায় অনেক বেশি জল টেনে নিতে পারবে। দামোদরে জল কম ঢুকবে এবং হাওড়ায় ব‌ন্যার প্রকোপ অনেকটা কমবে। শুধু তা-ই নয়, এই প্রকল্পে হুগলিতেও বন্যার
প্রকোপ কমবে।

সেইমতো হুগলি জেলা সেচ দফতরের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু হয়। ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে হুগলিতে আছে ১৪ কিলোমিটার। তার বিস্তার আরামবাগের অরুণবেড়া থেকে পূর্ব বর্ধমানের কোটশিমূল পর্যন্ত। সেই কাজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাকি কাজ বর্ষার আগেই বন্ধ হয়ে যায়।

ওই পাঁচ কিলোমিটার ড্রেজিং করার কথা হুগলি জেলা সেচ দফতরেরই। কেন কাজ বন্ধ, সে ব্যাপারে ওই দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজটি আপাতত বন্ধ আছে।’’ সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। দফতরের সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’

সচিবালয় সূত্রের খবর, প্রকল্পটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেই কারণেই কাজটি আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, সব দিক খতিয়ে দেখেই তো প্রকল্পটি করা হয়েছিল। এটি একটি মডেল প্রকল্প। ফের নতুন করে পর্যালোচনা করার কী আছে? তাঁরা আরও জানান, কোটশিমূল থেকে বেগুয়াহানা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে ড্রেজিং না হলে এটি বোতলের মুখের মতো অবস্থা হবে। কারণ, এখান থেকে ডিভিসি-র ছাড়া জল ভাগ হয়। এখানেই ড্রেজিং না হলে আগের মতোই দামোদরে বেশিরভাগ জল ঢুকবে এবং হাওড়ায় বন্যা সমস্যার সমাধান হবে না।

হুগলির সেচ দফতরের বাস্তুকারদেরও একটা বড় অংশ জানিয়েছেন, ড্রেজিং না হওয়া অংশ থেকে বালি এসে ভরিয়ে দিচ্ছে যে ১৪ কিলোমিটার ড্রেজিং হয়েছে সেই অংশটুকু। শুধু তা-ই নয়, ড্রেজিং না হওয়া এলাকা থেকে অবাধে বালিও চুরি হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement