পাঁচলায় ইংরেজি মাধ্যম মডেল হাই মাদ্রাসার কাজ অসমাপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে মেঝেসমান গাঁথনিটুকুই যা হয়েছে। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে থমকে রয়েছে পাঁচলার বেলডুবিতে হাওড়া জেলার একমাত্র সরকারি ইংরেজি মাধ্যম হাইমাদ্রাসা তৈরির কাজ।
অনেক জেলায় ওই হাইমাদ্রাসা তৈরির পরে পঠনপাঠন চালু হয়ে গেলেও হাওড়ায় একের পর এক জমি সংক্রান্ত গোলমালের জেরে প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে, কেউ জানেন না। ইতিমধ্যেই গচ্ছা গিয়েছে সরকারি কোষাগারের বহু টাকা। জেলার মেধাবী সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাঁচলার তৃণমূল বিধায়ক গুলশন মল্লিক
অবশ্য হাইমাদ্রাসা তৈরির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।
২০১৬ সালে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতি জেলায় একটি করে মডেল ইংরেজি মাধ্যম আবাসিক হাইমাদ্রাসা তৈরি করার। যেখানে নিখরচায় থেকে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা।
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রথমে হাওড়ার চেঙ্গাইলে ওই মাদ্রাসা তৈরির পরিকল্পনা হয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের চিহ্নিত জমিতে। সেখানে কাজ শুরু করে পূর্ত দফতর। ২২ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৪৮ টাকা খরচ করে মাটি পরীক্ষা এবং জমির উন্নয়নের কাজ হওয়ার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, ওই জমিতে যাতায়াতের রাস্তা ছিল খুব সঙ্কীর্ণ। ফলে, এখানে ভবন তৈরির পরিকল্পনা বাতিল হয়।
পরে প্রকল্পটি সরে আসে বেলডুবিতে। স্থানীয় কয়েকজন জমি দান করেন। এখানে চারতলা ভবন করার জন্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্প করে। পূর্ত দফতর ফের কাজ শুরু করে। ঠিকা সংস্থাকে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্ক-অর্ডার দিয়ে এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়।
কিন্তু গাঁথনি হয়ে যাওয়ার পরে ঠিকা সংস্থা ওই পর্যায়ের কাজের পাওনা টাকা দাবি করলে তা দেওয়া যায়নি বলে জেলা সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনকি, নিয়মানুযায়ী ঠিকা সংস্থাকে পরবর্তী কাজের নির্দেশও দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ঠিকা সংস্থা কাজ বন্ধ করে দেয়। তার পর থেকে ভবন তৈরির কাজ অসমাপ্তই পড়ে আছে।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, তারা এই প্রকল্পের জন্য টাকা চেয়ে অর্থ দফতরের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছে। সেই সময়ে যে অংশের কাজ হয়েছে তার তো বটেই, পরবর্তী পর্যায়ের টাকাও বরাদ্দ হয়নি। অনেক পরে অর্থ দফতর টাকা বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু করলেও অন্য সমস্যা দেখা দেয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যে জমিতে ভবন তৈরির কাজ হচ্ছে এবং ওয়ার্ক-অর্ডারে সেই জমির যে দাগ নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে অর্থ দফতরের কাছে পাঠানো ফাইলে জমি সংক্রান্ত যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে কিছু গরমিল ধরা পড়েছে। সে কারণে অর্থ দফতর টাকা বরাদ্দ করেনি।
এর ফলে মাদ্রাসার ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তেমনই বিপাকে পডে়ছে ঠিকা সংস্থা। কাজ করেও টাকা না পাওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে ওই সংস্থার এক কর্ণধার জানান।
বিরোধীরা এই প্রশ্নে শাসক দলকে বিঁধেছে। পাঁচলার ফরওয়ার্ড ব্লক নেলতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘রাজ্যের বেশিরভাগ জায়গায় ইংরেজি মাধ্যম হাইমাদ্রাসা চালু হয় গেল। হাওড়ায় হল না। এতে ক্ষতি হচ্ছে জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের। অথচ মাদ্রাসা করার নাম করে জলের মতো সরকারি টাকার অপচয় করা হয়েছে।’’ জমি জট কাটিয়ে অবিলম্বে মাদ্রাসা তৈরির কাজ চালু করার দাবি জানিয়েছেন ফরিদ।