ব্যবস্থা: গঙ্গার কিনারে স্কুল। পরিদর্শনে আধিকারিক দল (ইনসেটে)। ছবি: সুশান্ত সরকার
ভাঙনে গঙ্গার কিনারে দাঁড়ানো হুগলির জিরাট পঞ্চায়েতের চর খয়রামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা শনিবার সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেলেন কলকাতা হাই কোর্ট নিযুক্ত দুই স্পেশ্যাল অফিসার। শিক্ষক-শিক্ষিকা,পড়ুয়াদের অভিভাবক,পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনি-সহ নানা জনের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। ছবিও তোলেন।
সংবাদমাধ্যমে স্কুলটির ‘শোচনীয়’ পরিস্থিতির ছবি দেখে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করতে বলেছিলেন। হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, পঞ্চায়েত-কর্তাদেরও তলব করেছিলেন বিচারপতি। বুধবার শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দী, ডিআই (প্রাথমিক) তপন বসু, পঞ্চায়েত প্রধান সুচন্দ্রা রায়, উপপ্রধান অশোক পোদ্দার আদালতে যান। আদালতকে পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়, নতুন স্কুলভবন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। তাতে মাস ছয়েক সময় লাগবে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ৭ দিনের মধ্যে স্কুল অস্থায়ী জায়গায় সরাতে বলেন বিচারপতি।
শনিবার স্পেশ্যাল অফিসার সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় স্কুলে আসেন। বিডিও (বলাগড়) নীলাদ্রি সরকার, পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পায়েল পাল, ডিআই (প্রাথমিক), শিল্পা, সুচন্দ্রা, অশোক— সকলেই ছিলেন। স্পেশ্যাল অফিসাররা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কথা শোনেন। তাঁদের বক্তব্য লিখে সই করিয়ে নেওয়া হয়।
এলাকাবাসী জানান, ক্রমাগত ভাঙনে গত দেড় দশকে গঙ্গা চার-পাঁচ কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে। গত বছর মে মাসে স্কুলে বিধানসভা ভোটের বুথ হয়েছিল। তখন স্কুল থেকে গঙ্গা অন্তত ২৫ মিটার দূরে ছিল। অগস্টে স্কুলের বারান্দা, শৌচাগার, এক দিকের সিঁড়ি, খেলার মাঠ গঙ্গায় চলে যায়। তার পরে প্রশাসনের তরফে শালবল্লা, বালির বস্তা দিয়ে পাড় বাঁধানো হয়।
একাধিক গ্রামবাসীর দাবি, বালির বাঁধ বেশি দিন টিকবে না। তবে, পাড় বাঁধানোর জন্যই আগামী কয়েক মাস স্কুলভবন নিরাপদ বলে অনেকের বক্তব্য। স্কুলের কিছুটা দূরে পাড় বাঁধানোর কাজ চলছিল। স্পেশ্যাল অফিসারদের তা দেখান শিল্পা, পায়েলরা। প্রশাসন জানায়, প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নতুন ভবন তৈরি হলেই পাকাপাকি ভাবে সেখানে স্কুল উঠে যাবে।
প্রধানের দাবি, ‘‘আদালতে আমরা বলেছি, পাশেই ফ্লাড শেল্টারের ছবি স্কুল হিসেবে দেখানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের একাংশে। স্কুলভবন ততটা বিপজ্জনক অবস্থায় নেই। পরিস্থিতি দেখে স্পেশ্যাল অফিসাররা খুশি।’’ তিনি জানান, নতুন ভবন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে অস্থায়ী জায়গায় স্কুল চলবে। সেই পরিকাঠামো পঞ্চায়েত তৈরি করে দিচ্ছে। সুদীপ্তবাবু জানান, তাঁরা আদালতে রিপোর্ট জমা দেবেন।
২৫০-৩০০ মিটার দূরে অস্থায়ী ভাবে স্কুল সরছে। সুদীপ্তবাবু, বিক্রমবাবুরা এখানেও যান। পঞ্চায়েতের তরফে তাঁদের জানানো হয়, ৩৯০ বর্গফুট চৌহদ্দিতে টিনের ছাউনি, প্লাইউডের আড়াল দিয়ে ক্লাস হবে। শৌচাগার, জলের ব্যবস্থা পাশের বাড়িতে। সেখান থেকেই বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হবে। তবে, জনাপঞ্চাশ পড়ুয়ার স্থান সঙ্কুলান এখানে হবে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে। পাশে পাটখেত, ঝোপঝাড়, পাটকাঠি, খড়ের গাদা রয়েছে। পোকামাকড়, সাপখোপের কথা উঠলে পঞ্চায়েত-কর্তারা আশ্বস্ত করেন, গোটা চৌহদ্দি সাফসুতরো রাখা হবে। রাসায়নিক ছেটানো হবে। গ্রামে ঢোকার মুখে প্রস্তাবিত স্কুলভবনের জায়গাও দেখে আদালত নিযুক্ত দল।
বিচারাধীন বিষয় হওয়ায় শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, অস্থায়ী স্কুলের জায়গায় স্থানাভাবের প্রশ্নে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দেখা যাক। আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই তো ক্লাস চালু হবে।’’ কেউ মনে করছেন, কয়েক মাস স্কুল চালানোর জন্য এই জায়গার থেকে স্কুলভবনই উপযুক্ত।
যাদের নিয়ে এত চিন্তা, সেই পড়ুয়াদের অবশ্য ভাবনার বালাই নেই। শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা দিনে দোতলা স্কুলবাড়ির একতলায় পাখাহীন ঘরে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা গলা ছেড়ে যুক্তাক্ষর শিখেছে। পাশের ঘরে প্রাক্-প্রাথমিক এবং প্রথম শ্রেণির ক্লাস করেছে। মিড-ডে মিলে খিচুড়ি, পাঁপড়ভাজা খেয়ে তারা বাড়ি গিয়েছে।