পে লোডার দিয়ে দোকান ভাঙা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
মনোনয়ন পর্ব থেকেই চণ্ডীতলা ১ ব্লকে বিক্ষিপ্ত ভাবে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার, ভোট গণনার বিকেলে নবাবপুর পঞ্চায়েতের ভগবতীপুরে পে-লোডার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল এক সিপিএম এবং এক আইএসএফ প্রার্থীর দোকান। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোট-পরবর্তী হিংসায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। পুলিশ সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেয়নি। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
হুগলি গ্রামীণ পুলিশের দাবি, ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দোকান ভাঙার কাজে ব্যবহৃত একটি যন্ত্র আটক করা হয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের আজ, শুক্রবার আদালতে পেশ করা হবে। ধৃতেরা এলাকায় তৃণমূলের সমর্থক বলেই পরিচিত।
নির্বাচন-পর্বে এ রাজ্যে গুলি-বোমা কম চলেনি। দিকে দিকে মারধর ভাঙচুরের অভিযোগও বহু। তবে, পে লোডার এনে দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার কথা আগে তাঁরা শোনেননি বলে চণ্ডীতলার ওই এলাকার বাসিন্দারা বলছেন। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘অন্য রাজ্যে কোনও ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়ি বুলডোজ়ার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে পুলিশ, এমন শুনেছি। তা বলে, রাজনৈতিক হিংসায় পে-লোডারকে অস্ত্র করা হচ্ছে, এ রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা আগে শুনিনি।’’
মনোনয়ন পর্ব থেকেই নবাবপুর, ভগবতীপুরের একাংশে সিপিএম ও আইএসএফের প্রার্থীদের মারধর, হুমকির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, গণনার বিকেল থেকে অত্যাচার বাড়ে। চণ্ডীতলা-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে আইএসএফের প্রার্থী ছিলেন আসফার হোসেন। তৃণমূলের প্রাক্তন এই নেতা এক সময় জেলা পরিষদে কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক স্বাতী খন্দকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিজেপিতে যোগ দেন। পরে আইএসএফে। নবাবপুর পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী ছিলেন শেখ আতাউর। দু’জনেই হেরে যান। অভিযোগ, আসফারের দু’টি এবং আতাউরের একটি দোকান পে-লোডার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় তৃণমূলের লোকেরা। খবর দেওয়া হলেও পুলিশ সময়ে আসেনি। যতক্ষণে আসে, তিনটি দোকানই ভাঙা সারা।
আসফার, আতাউর ঘরছাড়া বলে দুই দলের দাবি। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আইএসএফের জেলা সহ-সম্পাদক লক্ষ্মীকান্ত হাজরা বলেন, ‘‘এই ঘটনার তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। পুলিশ সঠিক সময় পদক্ষেপ করলে এই পরিস্থিতি হত না।’’ সিপিএমের চণ্ডীতলা ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষের মন্তব্য, ‘‘ভোট পরবর্তী হিংসা চণ্ডীতলায় এর আগে কোনও দিন এমন পর্যায়ে যায়নি। পুলিশের ভূমিকা নিন্দনীয়।’’
তৃণমূল নেতা মলয় খাঁ বলেন, ‘‘সন্ত্রাস নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোথায় পে-লোডার চালিয়ে দোকান ভাঙা হয়েছে, আমার জানা নেই। যদি হয়ে থাকে, পুলিশে অভিযোগ করুক। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’
সিপিএমের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে দলের জেলা পরিষদের প্রার্থী সায়মা বেগমের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে তৃণমূলের লোকেরা। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।