Arambagh

এসসি-এসটি বৃত্তির কোটি টাকারও বেশি গায়েব, হুগলির ৩২টি স্কুল-কলেজের প্রধানদের শোকজ়

কারণ দর্শানোর চিঠিতে অতিরিক্ত জেলাশাসকের বয়ানে আছে, সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অন্যায় পদ্ধতিতে অনুমোদনের ভিত্তিতে একটি বিশাল সংখ্যক উপভোক্তা অন্যায় ভাবে টাকা তুলে নিয়েছে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

এসএসসি-দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে তোলপাড় চলছে। এর মধ্যে হুগলির মোট ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ মিলিয়ে) তফসিলি জাতি-উপজাতি (এসসি-এসটি) পড়ুয়া-বৃত্তির কোটি টাকারও বেশি গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা সামনে এল।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘পড়ুয়া’র ভুয়ো পরিচয়ে মোট ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকা গায়েব করা হয়েছে৷ এমনকি, ইঞ্জিনিয়ারিং পঠনপাঠনের সঙ্গে সংস্রবহীন কলেজ এবং সব ক’টি স্কুলেও বিটেক (আইটি) বা বিই(আইটি) পড়ানো হচ্ছে বলেও দেখানো হয়েছে। এই দুর্নীতি হয়েছে গত তিনটি অর্থবর্ষে (২০২০-২০২১, ২০১৯-২০২০ এবং ২০১৮-২০১৯)। ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরই শোকজ় করা হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে তাঁদের কারণ দর্শাতে হবে।

কারণ দর্শানোর চিঠিতে অতিরিক্ত জেলাশাসকের বয়ানে আছে, সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অন্যায় পদ্ধতিতে অনুমোদনের ভিত্তিতে একটি বিশাল সংখ্যক উপভোক্তা অন্যায় ভাবে টাকা তুলে নিয়েছে। সরকারি তহবিল অপব্যহার করা হয়েছে। অনুমোদনের ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য যাচাই না করে কেন এই অবহেলা। তা-ও লিখিত ভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় (ইন্টারন্যাল অডিট) যে ত্রুটিগুলির খোঁজ মিলেছে, তার কারণ জানতে চেয়েছি। কী রিপোর্ট আসে দেখা যাক। সেইমতো পদক্ষেপ করা হবে।”

শোকজ়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজগুলির কর্তারা। তাঁদের দাবি, তাঁদের তরফে কোনও ত্রুটি নেই। কোন স্তরে দুর্নীতি হয়েছে, তা তদন্ত হোক।

জেলার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠনের (অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেস) সভাপতি প্রণবকুমার নায়েক। তিনি আরামবাগের ডহরকুন্ডু শ্রীরামকৃষ্ণ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। ওই স্কুলের বৃত্তিপ্রাপক হিসেবে একটি ভুয়ো নাম রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তরফে কোনও ত্রুটি নেই। এর পিছনে নিশ্চিত ভাবেই কোনও বড় চক্র আছে। আমরাও পুরো বিষয়টার তদন্ত দাবি করছি।”

তালিকায় যে সব কলেজ রয়েছে, তার মধ্যে গোঘাটের অঘোরকামিনী প্রকাশচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পরমার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘এই কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনও বিষয় পড়ানো হয়নি। এই কলেজের পড়ুয়া নাম করে যে ৪৬ জন বৃত্তি তুলেছে, ওই সব নামে কোনও পড়ুয়ার হদিস মেলনি। চক্রটিকে ধরতে তদন্ত হোক।”

বিভিন্ন স্কুল-কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এসসি-এসটি বৃত্তির জন্য যে সব পড়ুয়া আবেদন করে, তাদের নথিপত্র খতিয়ে দেখে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও উপজাতি উন্নয়ন দফতরের ‘ওয়েসিস’ পোর্টালে নথিভুক্ত করা হয়। পরে ব্লক প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং শেষে রাজ্য স্তরে তা যাচাই করা হয়। তারপরেই বৃত্তির ছাড়পত্র মেলে। টাকা সরাসরি পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যায়। মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তি মেলে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। কলেজ স্তরে অনেক বেশি। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয় অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে কেউ বৃত্তি পেয়েছে ৪৫ হাজার টাকা, কেউ ৪৪ হাজার ৭০০ টাকা, কেউ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা।

অনেক স্কুল-কলেজের প্রধানদেরই দাবি, সরকারি পোর্টালটি সুরক্ষিত নয়। সাইবার-অপরাধের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তাঁরা। যে ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙুল উঠেছে, তার মধ্যে ২০টিই আরামবাগ মহকুমার। গত সোমবার অতিরিক্ত জেলা শাসকের (সাধারণ) দফতর থেকে জেলা শিক্ষা দফতর এবং মহকুমাশাসকদের কাছে ওই সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজের নাম, ভুয়ো বৃত্তিপ্রাপকদের তালিকা-সহ শোকজ়ের চিঠি পাঠানো হয়। বুধবার তা স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তালিকায় মোট ৩২৩ জন ভুয়ো বৃত্তিপ্রাপকের নাম-ঠিকানা, টাকার অঙ্ক এবং মোবাইল নম্বরের উল্লেখ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘ভুয়ো বৃত্তিপ্রাপকদের’ মধ্যে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সকলেরই ফোন বন্ধ ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement