ফাইল চিত্র
পাঁচ বছর আগে মামলা রুজু হয়েছিল। তার পরে ধাপে ধাপে ঝিলকে দূষণমুক্ত করতে নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট (সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা এসটিপি) তৈরি, ঝিলপাড়ের দখলদারদের সরানো-সহ একাধিক প্রস্তাবের কথা উঠে এসেছিল। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরিবেশকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণের মাত্রা তো কমেইনি। উল্টে এসটিপি তৈরি, দখলদার সরানোর গাফিলতি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মধ্যে দাবি-পাল্টা দাবি শুরু হয়েছে।
যেমন বুধবারই জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এসটিপি তৈরির জন্য প্রয়োজনীর জমি লিজ় নিতে হলে রাজ্য সরকারকে রেলের কাছে আবেদন করতে হত। কারণ আগেই ঠিক হয়েছিল, রেল এসটিপি তৈরির জমি লিজ়ে দেবে রাজ্য সরকারকে। কিন্তু তার জন্য সরকারি ভাবে যে আবেদন করার কথা, তা রাজ্য সরকার এখনও করে উঠতে পারেনি।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরের জুলাইয়ে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে হাওড়া পুর এলাকার তরল নিকাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ঝিলের পাশেই নিকাশি নালা, পাইপলাইন বসানো-সহ এসটিপি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তার পরের মাসে, অর্থাৎ অগস্টে যখন রেলের তরফে ওই প্রস্তাবের একটি নকশা চাওয়া হয়েছিল, তখন রাজ্য সরকারের তরফে তা আর পাঠানো হয়নি। যদিও এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এসটিপি তৈরির জমির জন্য বুধবারই রেলের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’’
নিজেদের হলফনামায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, জাতীয় পরিবেশ আদালতের ২০১৭ সালের নভেম্বরের নির্দেশ মেনে ঝিলের পাড়ে থাকা দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য নোটিস জারি করা হয়েছিল। উচ্ছেদ পর্বে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পুলিশি সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছিল একাধিক বার। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। ফলে এখনও দখলদার উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, রেল-রাজ্যের এই টানাপড়েনে সাঁতরাগাছি ঝিলের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘অন্তত ৩০-৩৫টি নিকাশি নালা সরাসরি ঝিলে গিয়ে পড়ছে। এই সংখ্যক নালা তবু চিহ্নিত করা সম্ভব। আরও অগুনতি কত ছোট নালা গিয়ে ঝিলে মিশছে, কে জানে!’’ পরিবেশকর্মীরা এ-ও জানাচ্ছেন, সাঁতরাগাছি ঝিলকে রাজ্য সরকারের তরফে ‘সাইলেন্ট জ়োন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা বার করা ছাড়া ওই ঘোষণার বাস্তবায়নে তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘এটা সৌভাগ্য যে, সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে এখনও পরিযায়ী পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। কিন্তু যে পরিস্থিতি ক্রমশ তৈরি হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতেই তারা হয়তো আর এই ঝিলে আসবে না। তেমন ঘটলে সেটা রাজ্যের পরিবেশের ক্ষেত্রে একটা বিপর্যয় হবে!’’