রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল পুরকর্মীদের বাসস্থান। চুঁচুড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
চাঙড় ভেঙে পড়া অব্যাহত। দেওয়ালও নড়বড়ে। বেরিয়ে এসেছে পুর আবাসনের কঙ্কালসার চেহারা। তেমনই একটি ঘরের ছাদ ভেঙে শুক্রবার জখম হয়েছেন এক মহিলা। চুঁচুড়া হাসপাতালের পাশের ওই আবাসনের এমন দুর্ঘটনার পরই শহরের বিপজ্জনক পুর-আবাসনগুলি সারানোর দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, আবাসনগুলির রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ভাবা হবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৮৬৫ সালে গঙ্গাপাড়ের হুগলি-চুঁচুড়া পুর এলাকায় বসতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাফাইকর্মীদেরও প্রয়োজন পড়ে। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বিহার অঞ্চলের মূলত হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ সেই কাজের জন্যই এ দিকে পাড়ি দেন। তাঁদের মধ্যে থেকেই কিছু মানুষ চুঁচুড়া পুরসভার সাফাইকর্মী হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান। চুঁচুড়া হাসপাতালের পাশে, তোলাফটকে, কারবালায় এবং কাপাসডাঙায় ওই কর্মীদের জন্য কিছু ঘর (লেবার কোয়ার্টার) করে দেওয়া হয়। সেই জায়গাগুলি ‘হরিজন পল্লি’ হিসেবেই পরিচিত লাভ করে।
পুরসভার পুরনো নথি বলছে, তখন বেতন থেকে ঘর ভাড়া কেটে নেওয়া হত। সেই টাকায় রক্ষণাবেক্ষণও হত। কিন্তু বর্তমানে আর ওই পদে স্থায়ী নিয়োগ হয় না। রক্ষণাবেক্ষণও বন্ধ বলে অভিযোগ। ফলে, শতাধিক বছরের পুরনো আবাসনগুলি ক্রমশই জরাজীর্ণ হতে শুরু করেছে।
পুরসভার একটি সূত্র বলছে, সরকারি ভাবে আবাসনের সংখ্যা হাতেগোনা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটা বর্তমানে ১০০ ছাড়িয়েছে। কারণ হিসেবে, শহরের বর্ষীয়ান নাগরিকরা জানান, কর্মীদের স্বজনেরাও ওই আবাসনের পাশে ফাঁকা জায়গায় ছোট ছোট ঘর বানিয়ে বংশ পরম্পরায় থাকতে শুরু করেন। বর্তমানে ওই পরিবারগুলির বেশিরভাগ সদস্যই পুরসভার অস্থায়ী সাফাইকর্মী। ফলে, পুরসভার একটা দায় তো বর্তায়।
এ বিষয়ে পুর-পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারী বলেন, ‘‘আমরাও চাই না, মানুষগুলি বিপজ্জনক ঘরে থাকুন। তবে, এই মুহূর্তে পুরসভার পক্ষ থেকে, সব আবাসন সারানো সম্ভব নয়। আমাদের পূর্ত দফতরের একটি দল ঘরগুলি দেখে এসেছে। আনুমানিক খরচের হিসেব কষে মেরামতির জন্য পুর দফতরের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’
পুরসভার উপরে অবশ্য একেবারেই ভরসা নেই আবসানের বাসিন্দাদের। সত্তরোর্ধ্ব ফুলিহারি বলেন, ‘‘বহুদিন ধরেই আবাসনগুলির খারাপ অবস্থা। প্রায় সব ঘরের ছাদ দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ে। প্লাস্টিক চাপিয়ে কোনও রকমে বসবাস করছি। পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয় না।’’ সাগরা হরিজন নামে আর এক আবাসিকের গলাতেও হতাশা। তিনি বলেন, ‘‘আমরাই শহর পরিষ্কার রাখি। কিন্তু আমাদের কথা পুরসভা ভাবে না। একদিন হয়তো এই ঘরে চাপা পড়েই মরতে হবে।’’