চন্দননগরে বড় বক্স এবং অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা। ছবি: তাপস ঘোষ
রামনবমীর শোভাযাত্রায় হুগলি শিল্পাঞ্চলে ডিজে বক্সের দৌরাত্ম্য অব্যাহত। রবিবার চন্দননগর, বৈদ্যবাটী, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া সর্বত্র ওই মিছিলে বিকট শব্দে ডিজে বেজেছে বলে অভিযোগ। যথারীতি বড় থেকে ছোট— সকলের হাতেই দেখা গেল অস্ত্র। পুলিশি উপস্থিতিতেই এই বেনিয়মে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
বিকেলে কান-ফাটা ডিজের তান্ডবে কার্যত তোলপাড় হয়েছে চন্দননগর। এখানে প্রায় ৫০টি কমিটির সদস্যরা ডিজে বক্স বাজিয়ে অস্ত্র হাতে এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। ছোটদের হাতেও এ দিন অস্ত্র দেখা যায়। চন্দননগরের বাসিন্দা, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে ডিজে বাজানো ও বাজি পোড়ানোর বিরুদ্ধে নাগরিক সমাবেশে যাওয়ার পথে আজ (রবিবার) দেখলাম চন্দননগর, শ্রীরামপুর-সহ অনেক জায়গায় অবাধে ডিজে বেজেছে। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার ফলে, যাঁরা ডিজে বাজাবেন না বলে ঠিক করেছিলেন, তাঁরাও হয়তো আগামিদিনে বাজাবেন।"ছোটদের হাতে অস্ত্র ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছ বহু সংগঠন। চাইল্ড লাইনের প্রাক্তন সদস্যা সুস্মিতা কোলে বলেন, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যপার। শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রভাব পড়বে। যারা ছোটদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা হওয়া উচিত।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রত্যেক শোভাযাত্রায় পুলিশের নজর ছিল। যারা আইন ভেঙেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার মোড় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রামনবমীর আয়োজক বারোয়ারিগুলি তাতে যোগ করে। প্রত্যেকটি কমিটির বেশিরভাগ মানুষের হাতেই ছিল অস্ত্র। জিটি রোডের উপরে অনেকেই তরোয়াল খেলায় মাতেন। সঙ্গে ছিল তারস্বরে ডিজে। তালডাঙ্গা থেকে পালপাড়া রোড ধরে বাগবাজার মোড় হয়ে ফের জিটি রোড ধরে জ্যোতির মোড় থেকে স্ট্র্যান্ড রোডে এসে মিছিল শেষ হয়।
বৈদ্যবাটী জোড়া অশত্থতলা থেকে জিটি রোড ধরে শ্রীরামপুরের মাহেশ পর্যন্ত শোভাযাত্রা যায়। এখানেও জোরে বক্স বেজেছে। মিছিলকারীদের হাতে অস্ত্রও ছিল।
উত্তরপাড়াতেও পুলিশের উপস্থিতিতে রামনবমীর মিছিলে ডিজে বাজার অভিযোগ উঠেছে। দিনের বিভিন্ন সময়ে একাধিক এলাকা থেকে মিছিল বের হয়। সকালে মাখলার বিড়লা মোড় থেকে মিছিল মাখলা থেকে উত্তরপাড়া শহরের বিভিন্ন প্রান্ত হয়ে উত্তরপাড়া বাবুঘাটে শেষ হয়। সিপিএম নেতা সলিল দত্ত বলেন, ‘‘উত্তরপাড়ায় দেখলাম, ধর্মীয় মিছিলে ডিজে বাজছে পুলিশের উপস্থিতিতেই। পুলিশকে বিষয়টি জানাই।’’ মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা পঙ্কজ রায়ের দাবি, ‘‘বক্স বেজেছে, ডিজে নয়।’’ ডানকুনিতে শোভাযাত্রায় জোরে বক্স বেজেছে। মিছিলকারীদের হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছে এখানেও। কপাসহাঁড়িয়ার তিসা এলাকাতেও রামনবমীর শোভাযাত্রায় জোরে বক্স বেজেছে বলে অভিযোগ।