ভিন্‌ রাজ্যে চাঁদা তুলে টাকা জোগাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা
Durga Puja 2023

প্লাবিত ৩ পঞ্চায়েতে পুজোর আড়ম্বর কমিয়ে ত্রাণে জোর

খানাকুল থানা এলাকার সবচেয় বড় বাজেটের পুজো হিসেবে পরিচিত ধান্যগোড়ির ‘মা দুর্গা সেবা সঙ্ঘে’র পুজো। এ বার বাজেট ২২ লক্ষ টাকা রেখেই সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

খানাকুল শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৭
Share:

জলে ডুবে রয়েছে খানাকুলের মাড়োখানা পঞ্চায়েতের পানশিউলির পুজো মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

ধীরে জল নামছে খানাকুল ২ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত (ধান্যগোড়ি, মাড়োখানা এবং জগৎপুর) থেকে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তিন পঞ্চায়েতে পুজোর তোড়জোড় ফের শুরু হয়েছে। আড়ম্বর কমিয়ে উদ্যোক্তারা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। প্লাবিত এলাকাগুলির বেশ কিছু পুজো কমিটি ত্রাণের কাজে অতিরিক্ত এক-দেড় লক্ষ টাকা বাজেট বাড়িয়েছে। কিছু পুজো কমিটি আবার বাজেট না বাড়ালেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করে সেই টাকায় ত্রাণের খাতে যোগ করছে। এর মূলে রয়েছেন পুজোগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করা পরিযায়ী শ্রমিকেরা।

রূপনারায়ণ নদের গায়েই মাড়োখানার পানশিউলি সর্বজনীনের পুজো বাজেট প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ছুঁয়েছে। পুজেো কমিটির সম্পাদক সুজিত পাল বলেন, “আমরা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে বাজেট বাড়িয়েছি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিও বাতিল করে সেই টাকা ত্রাণের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

Advertisement

খানাকুল থানা এলাকার সবচেয় বড় বাজেটের পুজো হিসেবে পরিচিত ধান্যগোড়ির ‘মা দুর্গা সেবা সঙ্ঘে’র পুজো। এ বার বাজেট ২২ লক্ষ টাকা রেখেই সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। সেই অর্থ ত্রাণের কাজে লাগানো হবে বলে জানান পুজো কমিটির সহ-সম্পাদক রাহুল গুছাইত। আবার ৭ লক্ষ টাকা বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে জগৎপুর পঞ্চায়েত এলাকার নন্দনপুর জগদীশতলা সর্বজনীনের সহ-সভাপতি তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সঞ্জিৎ মণ্ডল বলেন, “অনুষ্ঠান বাতিল করা ছাড়াও আমরা মণ্ডপ ও আলোর আড়ম্বরও কমাচ্ছি। বাজেটের সিংহভাগে দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ করা হবে।’’

প্লাবিত তিনটি অঞ্চলে মোট অনুমোদিত পুজোর সংখ্যা ১৮টি বলে থানা সূত্রে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যাপ্রবণ এলাকায় বিশেষ চাঁদা মেলে না। পুজোগুলির সিংহভাগ টাকার জোগান দেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে দিল্লি, মুম্বই, গুজরাত, রাজস্থান-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকেরা। বন্যাপীড়িত মানুষদের পাশে থাকার শর্ত থাকে তাঁদের। সেই মতোই পুজোর অনুষ্ঠানের দিনগুলিতে বস্ত্র বিতরণ-সহ নানা ত্রাণের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য শিবির, বসিয়ে খাওয়ানো ইত্যাদি
কর্মসূচি থাকে।

যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজের অঞ্চল বা গ্রামে পুজোর তহবিল জোগান দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে মুম্বইয়ে সোনার কাজে যাওয়া জগৎপুরের প্রৌঢ় শিশির গায়েন ফোনে বলেন, ‘‘আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ নিজ এলাকার সামাজিক দায়বদ্ধতা নতুন নয়। ৩০ বছর আমি মুম্বইতে আছি। সম্প্রতি আমার ছেলেও এসেছে। পুজোকে উপলক্ষ করে বন্যাপীড়িতদের পাশে থাকতে প্রতি মাসে তিল তিল করে টাকা জমাই আমরা।’’

একই কথা জানিয়েছেন মুম্বইতে সোনা-রুপোর দোকানে কাজ করা ধান্যগোড়ির শেখ সাজিদুলও। তিনি বলেন, “পুজোয় বন্যাপীড়িতদের সাহায্য করার জন্য আমরা নিজেরা ছাড়াও অন্য রাজ্য থেকে আসা সহকর্মীদের থেকেও চাঁদা তুলি। ভিন ধর্মের লোক হয়েও গ্রামের দুর্গাপুজোর জন্য চাঁদা চাই দেখে অনেকেই খুশি হয়ে দেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement