হাওড়া পুরসভায় এক সময়ে ৭৭ জন ইঞ্জিনিয়ার থাকলেও ৩৫ জন অবসর নিয়েছেন। ফাইল ছবি।
এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত!
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা হাওড়া পুরসভায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরকারি কর্মী হিসেবে পাচ্ছিলেন সমস্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধাও। সম্প্রতি রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দেওয়া নির্দেশ থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন, কর্মজীবনের প্রায় ২০টি বছর তাঁরা সরকারি কর্মীই ছিলেন না! ছিলেন ঠিকাকর্মী। তাই সরকারি কর্মী হিসাবে চাকরিজীবনের প্রথম ২০ বছরে পাওয়া টাকার বেশ বড় একটি অংশ মিটিয়ে দিলে তবেই মিলবে অবসরকালীন প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি এমনকি পেনশনের টাকা। এই ঘোষণায় মাথায় হাত পড়ছে হাওড়া পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার-সহ কিছু করণিকের। চলতি মাস থেকেই এর প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছেন তাঁরা। যার ফলে পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৫ সালের সরকারি আদেশনামা অনুযায়ী পরের বছর থেকে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সরকারি নিয়ম মেনে পরীক্ষা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারের ৮৭টি এবং করণিকের ২২টি-সহ অন্যান্য পদে পর্যায়ক্রমে ওই কর্মীদের ক্যালকাটা আর্বান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (৩) বা সিইউডিপি-৩ প্রকল্পে নিয়োগ করা হয়। সর্ম্পূণ সরকারি নিয়ম মেনে এত দিন সরকারি বেতন-কাঠামো অনুযায়ী বেতন-সহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছিল তাঁদের। যদিও তাঁদের নিয়োগপত্রে স্থায়ী সরকারি কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ছিল না।
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, ১৯৮৯ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে সকলকে পুরসভার সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখন রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর নির্দেশ দিয়েছে, ১৯৮৯ সালের পরে হাওড়া পুরসভায় সিইউডিপি-৩ প্রকল্পের কাজে যোগ দেওয়া সব ইঞ্জিনিয়ার ও করণিকদের ২০০৮ সাল থেকে সরকারি কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। ১৯৮৯ সাল থেকে পাওয়া সরকারি টাকার হিসাব মেটালে তবেই তাঁরা পাবেন প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি এবং ছুটি বিক্রির টাকা।
ওই পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অমানবিক। সরকারি ওই সিদ্ধান্তের জন্য ইতিমধ্যে অবসর নেওয়া ৩৫ জন ইঞ্জিনিয়ার অবসরকালীন টাকা না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হতদরিদ্র অবস্থায় ইতিমধ্যে তিন জন করণিক মারা গিয়েছেন। আমাদের ভবিষৎও অন্ধকারে।’’
হাওড়া পুরসভায় এক সময়ে ৭৭ জন ইঞ্জিনিয়ার থাকলেও ৩৫ জন অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে ৩৩ জন ইঞ্জিনিয়ার পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ড সামলাচ্ছেন। তাঁদের এক-এক জনের হাতে রয়েছে তিন-চারটি করে দফতরের দায়িত্ব। সরকারি এই নির্দেশের প্রতিবাদস্বরূপ ইতিমধ্যেই ইঞ্জিনিয়ারেরা এক-এক জন একটি করে দফতরের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ‘গো স্লো’ পদ্ধতি নিয়েছেন।
এই বিষয়ে হাওড়া মিউনিসিপ্যাল স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা এর প্রতিবাদে বুধবার অর্ধদিবস ছুটি নিয়ে পুর কমিশনারের অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী কালে টানা তিন দিন গণছুটি নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, ইঞ্জিনিয়ারদের এই আন্দোলনের জন্য হাওড়া পুরসভার স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হবে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে কথা বলে এই জটিলতা অবিলম্বে কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’