Primary Schools

হাওড়ার বহু প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া নামেই

প্রাথমিক স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা হাতে গোনা হলেও পঠনপাঠনের জন্য সব রকম ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫০
Share:

সদ্য চালু হওয়া পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হচ্ছে না ছাত্রছাত্রীরা। প্রতীকী চিত্র।

কোনও স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পডুয়ার সংখ্যা ২, কোনওটিতে ৪!

Advertisement

রাজ্য শিক্ষা দফতরের সিদ্ধান্ত মেনে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করে বিপাকে পড়েছেন হাওড়া জেলার কয়েকশো প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়ারা সে ভাবে ভর্তিই হচ্ছে না। চতুর্থ শ্রেণিতে পাশ করার পরে তারা চলে যাচ্ছে হাই স্কুলে।

প্রাথমিক স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা হাতে গোনা হলেও পঠনপাঠনের জন্য সব রকম ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে। ওই ক্লাসে পঠনপাঠন চালানোর ভবিষ্যৎ নিয়েও তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অনেকেরই দাবি, হয় হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধ করা হোক, না হয় প্রাথমিক স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি তুলেদেওয়া হোক।

Advertisement

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত হাওড়া জেলায় ঠিক আছে। তবে, প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা দফতর।’’

২০১৮ সালে রাজ্য শিক্ষা দফতর একটি নির্দেশিকায় জানায়, যে সব প্রাথমিক স্কুলে পরিকাঠামো আছে, সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে পঠনপাঠন চালু করতে হবে। তারপরে ধীরে ধীরে প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলেই। হাই স্কুল থেকে ওই শ্রেণির পঠনপাঠন তুলে দেওয়া হবে।

সেই নির্দেশ মতো ওই বছরেই হাওড়ার তিন হাজারের মধ্যে প্রায় ৫০০ প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পঠনপাঠন চালু করা হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই বিভাগটি খুঁড়িয়ে চলতে থাকে বলে বহু স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন। পড়ুয়াদের মধ্যে এই শ্রেণিতে ভর্তি হতে অনীহা দেখা দেয়। করোনা-পর্বে প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ ছিল। ভর্তি প্রক্রিয়া জারি থাকলেও বেশিরভাগ পড়ুয়াই প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি। সেই খরা কাটেনি চলতি শিক্ষাবর্ষেও।

উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের শ্রীকৃষ্ণপুর বাগপাড়া প্রাথমিক স্কুলে ২০১৮ সালেই চালু হয়েছে পঞ্চম শ্রেণিতে পঠনপাঠন। এখানেও একই সমস্যা। চলতি শিক্ষাবর্ষে এখানে পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র চার জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক রামানন্দ সরকার বলেন, "আমার স্কুল থেকে এ বছর ২৬ জন পড়ুয়া চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। তাদের মধ্যে ২২ জনই চলে গিয়েছে হাই স্কুলে।’’

আমতা-১ ব্লকের উদং হাই অ্যাটাচড প্রাথমিক স্কুলটি চলে উদং হাই স্কুলের ভবনেই। ওই প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ বেশিরভাগ পড়ুয়া হাই স্কুলটিতে চলে গিয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক পিন্টু পাড়ুই। পিন্টু বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের নেতা। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতি করলেও অনেক অভিভাবক এখানে ছাত্র ভর্তি করাবেন।’’

শ্রীকৃষ্ণপুর বাগপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘অভিভাবকদের আমরা বোঝাই, আমাদের স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করান। কিন্তু অভিভাবকরা রাজি হন না।’’

কেন প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে অনীহা ছাত্রছাত্রীদের?

অভিভাবকদের একাংশের দাবি, জেলার বহু স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্য স্কুল থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হয় না। তাই প্রাথমিক স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি পাশ করার পরেই তাঁরা ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ফলে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ঝক্কি পোহাতে হয় না। অভিভাবকদের কেউ কেউ আবার প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির পরিকাঠামো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, হাই স্কুল ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের ভর্তি করাতে চায়নি, কিছু ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ পেয়ে সংসদের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement