কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প নেই। এখনও ভাগাড়ই ভরসা চন্দননগরে। নিজস্ব চিত্র।
পুরসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কী ভাবছেন চন্দননগরের মানুষ? অনেকেই বলেন, বড় সুন্দর শহর এই চন্দননগর। এখানকার সৌন্দর্যের সুখ্যাতি এখন রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে গোটা দেশ এমনকি দেশের বাইরেও। এই সৌন্দর্যকে অক্ষুন্ন রাখতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন একটি সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ যদি বা চালু আছে, সেই বর্জ্যের একটি বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা এখনও দূর অস্ত। এই শহরে বর্জ্যের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা কিন্তু একটা সময়ে চালু করা হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, তার অস্তিত্বের কোনও প্রমাণই আজ আর আমরা পাই না।
আমাদের শহর আরও যে একটি বিষয়ে প্রকৃতই ধনী, তা হল এই শহরের ঐতিহ্য। প্রায় কলকাতার সমসাময়িক এই ঐতিহ্যপূর্ণ শহরের জন্ম এবং বৃদ্ধি গঙ্গা এবং সরস্বতী— এই দুই নদীকে কেন্দ্র করে। স্বাধীনতা সংগ্রামের একদা পীঠস্থান এই শহরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষীর আগমন ঘটেছে। এখন তার এমনই হতদরিদ্র অবস্থা যে, বারবার বলা সত্বেও এখানকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যের নানাবিধ নিদর্শন এবং মনীষী ও বিপ্লবীদের মূর্তির কোনও সংস্কার হয় না দীর্ঘ সময় ধরে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই মূর্তির নিচে লিখিত নামটুকু পর্যন্ত পড়া যায় না।
অধুনা আর একটি ভয়াবহ সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে এই শহর। চন্দননগরের বিস্তীর্ণ এলাকা গঙ্গার তীরে অবস্থিত। এই তীরবর্তী এলাকার একটি অংশ সাম্প্রতিক অতীতে ভাঙনের কবলে পড়েছিল। অবিলম্বে এই বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ক্রীড়াজগতেও বিশেষ সুনামের অধিকারী এই শহর। দেখতে হবে এই শহরের খেলার মাঠগুলি যেন উৎসবের মাঠে পরিণত হয়ে না পড়ে, ক্রীড়া অনুশীলনের কাজেই ব্যবহৃত হয়।
আমরা কখনওই এ কথা বলতে চাই না যে, এত দিন ধরে পুর-প্রশাসন কোনও কাজই করেননি। পথঘাটের সংস্কার হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় নতুন আলোকস্তম্ভ বসেছে। কিন্তু আলোচিত মূল বিষয়গুলি মোটের উপরে অবহেলিতই থেকে গিয়েছে। চন্দননগরবাসী আশা করেন, আসন্ন নির্বাচন পরবর্তী প্রশাসক এবং বিরোধী দল এই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন। শহরবাসী আরও চান, এই কাজগুলি যেন হয় সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে, ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি তৈরি করে। দুঃখের বিষয়, পুর আইনে থাকা সত্বেও আজ পর্যন্ত শহরে একটি সক্রিয় হেরিটেজ কমিটি তৈরি করা যায়নি।
(লেখকদ্বয় চন্দননগরের বাসিন্দা এবং সমাজকর্মী)