পান্ডুয়া ব্লক অফিসে পুলিশের সঙ্গে বচসা বিজেপির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। ছবি: সুশান্ত সরকার
প্রার্থী নয়, সোমবার মনোনয়ন-পর্বে পান্ডুয়ায় কার্যত নাটক হল স্থানীয় বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। ১৪৪ ধারা কার্যকরের যুক্তিতে ব্লক অফিসের পথে সাংসদকে আটকায় পুলিশ। বচসা হয়। পান্ডুয়ার ওসি অর্ণব গঙ্গোপাধ্যায়কে সাংসদ ধাক্কা মারেন বলে পুলিশের অভিযোগ। শেষে, বিডিও স্বাতী চক্রবর্তী তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।
হুগলি গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘ওখানে ঠিক কী হয়েছিল, খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ওঁর (সাংসদের) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ লকেটের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি সাংসদ, যেতেই পারি। অন্যায় ভাবে আটকাছে তৃণমূলের দলদাস পুলিশ।’’
সাংসদ এ দিন পোলবা-দাদপুর এবং বলাগড় ব্লক কার্যালয়েও যান। বিডিওদের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে কোনও সমস্যা হয়নি। ফলে, একই জেলার পান্ডুয়ায় পুলিশ-প্রশাসনের ‘বাড়তি উদ্যোগ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে গেরুয়া শিবির। বিডিও (পান্ডুয়া) ফোন ধরেননি। এসএমএস-এর জবাবও দেননি। বেলা ১টা নাগাদ তেলিপাড়া মোড়ে ব্লক কার্যালয়ের এক কিলোমিটার আগে পান্ডুয়া পঞ্চায়েতের সামনে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকায় লকেটের গাড়ি। লকেট হাঁটতে থাকেন। পরের ব্যারিকেডে পুলিশ তাঁকে আটকালে বচসা বাধে। সাংসদ বলেন, রাস্তায় হাঁটতে পুলিশ বাধা দিতে পারে না। পুলিশ ছেড়ে দেয়।
এর পরে ব্লক কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে পুলিশ ফের তাঁকে আটকায়। সেখানে ছিলেন ডিএসপি (ক্রাইম) দেবীদয়াল কুণ্ডু, সিআই (মগরা) শ্যামল চক্রবর্তী, ওসি। সাংসদ জানান, বিডিও-র সঙ্গে দেখা করবেন। পুলিশ জানিয়ে দেয়, বিডিও-র অনুমতি ছাড়া ঢোকা যাবে না। লকেট ওসিকে ধাক্কা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন বলে পুলিশের অভিযোগ। আঙুল উঁচিয়ে সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পুলিশ বেআইনি কাজ করছে।’’ কার্যালয়ে তখন মনোনয়ন দিতে আসা শতাধিক প্রার্থীর ভিড়। হট্টগোল বেঁধে যায়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় ২৫ মিনিট পরে বিডিও-র অনুমতিতে সাংসদকে যেতে দেওয়া হয়। বিডিও লকেটের কাছে দাবি করেন, ১৪৪ ধারা ভেঙে তিনি লোকজন নিয়ে ব্লক অফিসে এসেছেন। লকেট পাল্টা দাবি করেন, তিনি একাই এসেছেন দলের কর্মীদের মনোনয়নপত্র ঠিকমতো জমা নেওয়া হচ্ছে কি না, দেখতে। বিডিও-র সঙ্গে মিনিট পাঁচেক কথা বলে সাংসদ বেরিয়ে যান।
লকেটকে বিঁধে ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘সাংসদের সারা বছর দেখা নেই। ওঁরা প্রার্থী পাচ্ছেন না। তাই, গোলমাল করতে এসেছিলেন।’’ একই সুরে সিপিএম নেতা আমজাদ হোসেনের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি সর্বত্র প্রার্থী পাচ্ছে না। তাই, সাংসদ নাটক করে গেলেন। ওঁর জন্য মনোনয়নে সময় নষ্ট হল।’’
অন্য দিকে, বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তুষার মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘অন্য দুই ব্লকে সাংসদকে আটকানো হল না। পান্ডুয়ায় কেন হল? পান্ডুয়ার পুলিশ-প্রশাসন শাসক দলের কাছে বেশি নম্বর প্রত্যাশা করছে! বিজেপির প্রার্থী সর্বত্র রয়েছে।’’
পান্ডুয়া হয়ে লকেট বলাগড় বিডিও কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন। বিডিও নীলাদ্রি সরকারের সঙ্গেও দেখা করেন। বিডিও বলেন, ‘‘সাংসদ মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে খোঁজখবর নেন। সামগ্রিক ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’’