মাস্ক না পরে বাইরে বেরোলে চলছে পুলিশের ধরপাকড়। মঙ্গলবার হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে। ছবি: তাপস ঘোষ, সঞ্জীব ঘোষ ও সুশান্ত সরকার
করোনা সংক্রমণ বাড়ছেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হুগলির ৭টি ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েত এবং ৬টি পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডকে ‘গণ্ডিবদ্ধ এলাকা’ (কনটেনমেন্ট জ়োন) হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। গ্রামীণ হাওড়াতেও বেশ কিছু এলাকা ‘গণ্ডিবদ্ধ’। এখানে সরকারি হাসপাতালেও করোনা হানা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রচার চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু সাধারণ মানুষের একাংশের হেলদোল নেই। তবে, হুগলির চন্দননগরে পুরভোটে বিভিন্ন দলের প্রার্থী বিধি মেনে প্রচার করেছেন।
হুগলির সিএমওএইচ রমা ভূঁইয়া বলেন, ‘‘মাঝে ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছিল। সেই পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। টিকাকরণ কেন্দ্রে ফের ভিড় হচ্ছে। ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি পড়ুয়াদের স্কুলে টিকাকরণ চলছে। ওই বয়সের যারা স্কুলে যায় না, সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।’’
হুগলিতে উত্তরপাড়া শহরে সংক্রমণ সব থেকে বেশি। এখানে ১০টি ওয়ার্ড ‘গণ্ডিবদ্ধ’। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত এখানে আক্রান্ত ৯৪ জন। পুরসভা টাস্কফোর্স গঠন করেছে। সংক্রমিতের পরিবারে কিছু প্রয়োজন হলে তারা মেটাবে। সংক্রমিতের বাড়ি থেকে নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ করবেন পুরকর্মীরা। পুর-প্রশাসক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সংক্রমিতের বাড়ির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। পুর-এলাকার ৯টি চিহ্নিত এলাকা, যেখানে মানুষের ভিড় বেশি হয়, সেখানে টানা মাইক প্রচার চলবে। পুলিশকে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে অনুরোধ করেছি। মানুষের কাছে অনুরোধ, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোবেন না। বেরোলে মাস্ক পরুন।’’
পান্ডুয়া এবং খন্যান পঞ্চায়েত ‘গণ্ডিবদ্ধ’। এখানকার নানা জায়গায় ঘুরে দেখা গেল, সচেতনতা উধাও। বহু লোক মাস্ক ছাড়াই বাজারে ঘুরছেন। কেউ মুখে রুমাল বা গামছা বেঁধে ‘নিয়মরক্ষা’ করছেন। কারও মাস্ক পকেটে। পুলিশ দেখলে তা মুখে উঠে আসছে। জিটি রোডের তেলিপাড়া মোড়, কালনা মোড়ে পুলিশকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সতর্ক করেছেন লোকজনকে। মাস্ক না পরলে লাঠি উঁচিয়ে শাসন করেছেন। মাস্ক বিলি করেছেন। পুলিশ দেখে বিনা মাস্কের লোক পিঠটান দিয়েছেন। এমনই এক যুবকের কথায়, ‘‘সব সময় মাস্ক পরে ঘোরা অসম্ভব।’’ পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিনশো মাস্ক বিলি করা হয়েছে। মাস্ক না পরায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
একটি নাগরিক সংগঠনের সভাপতি শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘পরিস্থিতি যাতে আরও গুরুতর না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিক। পুলিশের সেই ভূমিকা সর্বত্র দেখছি না।’’
রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পুরভোটে প্রার্থী-সহ ৫ জন বাড়ি বাড়ি প্রচার করতে পারবেন। চন্দননগরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শোভনলাল সেনগুপ্ত মঙ্গলবার ২ জন দলীয় কর্মীকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান। বিজেপি প্রার্থীরাও অল্প লোক নিয়েই বাড়ি বাড়ি প্রচার সারেন। তবে মাস্ক পরা নিয়ে সচেতনতা তাঁদের মধ্যে আগাগোড়া দেখা যায়নি। তৃণমূল প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনির কাজে প্রশাসনিক দফতরে ব্যস্ত ছিলেন।
মাস্ক পরা নিয়ে পুলিশ কড়াকড়ি শুরু করেছে হাওড়ায়। বাগনান, আমতা, উলুবেড়িয়া, উদয়নারায়ণপুর, জগৎবল্লভপুরে বিনা মাস্কের লোকজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। হাওড়া গ্রামীণ জেলার এসপি সৌম্য রায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে বিধিনিষেধ জারি করেছে, সেইমতোই পুলিশ কাজ করছে। মাস্ক না পরলে মহামারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বেশির ভাগ মানুষকেই অবশ্য মাস্ক পরতে দেখা গিয়েছে। তবে বাস, অটোতে ঠাসা ভিড় ছিল।