Dengue Fear

ডেঙ্গির হানা, জল জমে বৈদ্যবাটীর নানা পাড়ায়, পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, ক্ষোভও

নবম শ্রেণির ছাত্রী কায়নাতের জ্বর আসে গত সোমবার। বৃহস্পতিবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। শুক্রবার রিপোর্টে দেখা যায়, ‘ডেঙ্গি পজ়িটিভ’। ওই দুপুরে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বৈদ্যবাটী শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৪৭
Share:

থইথই: জল পেরিয়ে যাতায়াত বৈদ্যবাটীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ

পনেরো বছরের এক কিশোরীর মৃত্যুর পরে দু’দিন পেরিয়ে গেলেও ডেঙ্গি প্রতিরোধে রবিবার বিকেল পর্যন্ত বৈদ্যবাটী পুরসভার তৎপরতা দেখা গেল না। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমে রয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, আজ, সোমবার থেকেই অভিযানে ঝাঁপানো হবে। সেই পরিকল্পনা করতে রবিবার পুরসভার সাফাই ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক হয়। কাউন্সিলররাও বৈঠকে ছিলেন।

Advertisement

পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, ‘‘কোথায় কাজের খামতি রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমস্যা মোকাবিলায় জোরকদমে কাজ করা হবে সোমবার থেকেই।’’ তিনি জানান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মৃত কিশোরী কায়নাত পরভিনের বাড়ি এই ওয়ার্ডের কাজিপাড়ায়) জ্বর নির্ণয়ে শিবির করা হবে। পাশাপাশি যোগ করেন, ‘‘মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’’

নবম শ্রেণির ছাত্রী কায়নাতের জ্বর আসে গত সোমবার। বৃহস্পতিবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। শুক্রবার রিপোর্টে দেখা যায়, ‘ডেঙ্গি পজ়িটিভ’। ওই দুপুরে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। কয়েক ঘণ্টা বাদে সে মারা যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চতুর্দিকে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত হলেও সাফাইয়ের কাজে পুরসভা উদাসীন। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কাজও দায়সারা। পুর-স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

Advertisement

রবিবার দেখা গিয়েছে, ঘনবসতিপূর্ণ এই ওয়ার্ডের নানা জায়গায় নর্দমার জল উপচে রাস্তায়, বাড়ির চৌহদ্দিতেও দাঁড়িয়ে। ইতিউতি ঝোপজঙ্গল, আবর্জনা। অভিযোগ, মশার উপদ্রবে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সামনেও দিন পনেরো ধরে জল জমে। ওই কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে জল পেরিয়ে। অন্তঃসত্ত্বা, সদ্য মা হয়েছেন, এমন মহিলা ও শিশু মিলিয়ে এখানে প্রায় ৮০ জন পরিষেবা পান। শিক্ষাকর্মী যুথিকা দাস বলেন, ‘‘স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু, জল নামানোর ব্যবস্থা হয়নি। মহিলারা আসতে চাইছেন না। কয়েক মাস আগে মশার লার্ভা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছিল। মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’’

স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর রত্না দাস বলেন, ‘‘এলাকায় একটি নতুন জলের পাম্প বসানো হয়েছে। জলের চাপে পাইপলাইন ফেটে বিপত্তি। পাইপলাইন সারানো হয়েছে। জমা জল দ্রুত সরানোর চেষ্টা চলছে।’’

অভিযোগ, ২৩ বাদেও ১, ৪, ১১, ১৪, ১৭, ১৮, ২২ নম্বর ওয়ার্ডেও জল জমে। পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর কৃষ্ণেন্দু কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘‘ওইসব জায়গা নিচু। অপরিকল্পিত ভাবে বসতি গড়ে ওঠাতেই সমস্যা। নিকাশি নালার জল সরছে না। পুর-কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, নির্দিষ্ট নিয়মে মশার লার্ভা মারার তেল নিয়মিত ছেটানো হয়।

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হুগলিতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রয়েছেন পাঁচশো জনেরও বেশি। তার মধ্যে ১০১ জন হাসপাতালে ভর্তি। শ্রীরামপুরের চারটি, উত্তরপাড়া ও রিষড়ার ৩টি এবং বৈদ্যবাটী, ডানকুনি, ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানি, চন্দননগরের একটি করে ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি রয়েছে। গ্রামীণের ৬টি ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতে ডেঙ্গির দাপট রয়েছে।

ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রবিবার ডানকুনি শহরে হাউজ়িং থেকে কালীপুর পর্যন্ত মিছিল করে বিজেপি। কালীপুর মোড়ে পথসভা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্যনেত্রীপ্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement