পান্তা উৎসব চুঁচুড়ায়। ছবি: তাপস ঘোষ
বর্ষার দেখা নেই। হাঁসফাঁস গরমে কাহিল অবস্থা। জৈষ্ঠ্যের এমন দুঃসহ তাপ থেকে প্রাণ জুড়োতে বৃহস্পতিবার পান্তা উৎসব হল চুঁচুড়ায়। তপ্তদুপুরে আয়েস করে পান্তা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠল।
শহরের কারবালা এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই আয়োজন করেছিল। গলায় আমের শরবৎ ঢেলে শুরু। তার পরে মূলপর্ব। জামাই-আদরে সাজানো নানা পদ। কানা-উঁচু থালায় জল ঢালা ভাত। তাকে ঘিরে গন্ধরাজ লেবু, কাঁচালঙ্কা, শুকনোলঙ্কা ভাজা, পেঁয়াজ। তার সঙ্গে আলু-চোখা, ডালের বড়া, মাছের ডিমের বড়া, পেঁয়াজি, মাছের মাথা দিয়ে ছ্যাঁচড়া, মৌরলা মাছের ঝাল, কাতলা মাছের কালিয়া, পাবদা মাছের ঝোল। আমের চাটনি, পাঁপড়ও। শেষ পাতে হিমসাগর আম, কয়েক কোয়া কাঁঠাল এবং আইসক্রিম।
পান্তার লোভ সামলাতে না পেরে অনেক বাড়িতেই হেঁশেল চড়েনি। বেলা ১টা থেকে সংস্থার ঘরে দলে দলে লোক আসতে থাকেন। এলাকাবাসী শুধু নন, বাড়িতে আসা আত্মীয়-স্বজনও ছিলেন সেই দলে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জন খাওয়াদাওয়া সারলেন। তরতাজা যুবক থেকে বাতের ব্যথায় কাবু আটপৌরে গিন্নি, কলেজের ছাত্র থেকে চাকরি করা যুবতী— সবাই মজলেন পান্তার প্রেমে। হাসি-মস্করাও চলল।
পেটপুরে পান্তা খাওয়ার পরে সহেলী গুহ নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘বাড়িতে বারোমাস সেই একই রান্নাবান্না। পান্তায় শুধু যে স্বাদ বদল নয়, গরমে স্বস্তি পেলাম। বাড়ির সবাই মিলে হইহই-ও কম হল না।’’ জনৈক সোমা নন্দী বলেন, ‘‘কর্মসূত্রে হায়দরাবাদে থাকি। একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাড়িতে এসেছি। তিন দিন আগেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। পান্তা উৎসবের কথা শুনে টিকিট বাতিল করে থেকে গেলাম। সবাই মিলে পান্তার ভুরিভোজে কী আনন্দ যে পেলাম!’’ তাঁর উচ্ছ্বাস, ‘‘ওখানে তো বাঙালিদের উৎসব সে ভাবে হয় না। পান্তার সঙ্গে বাঙালিয়ানার ভরপুর মজা চেটেপুটে খেলাম।’’
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক অমিত মল্লিক বলেন, ‘‘সারা বছর বাড়ির খাবারে যেন অরুচি আসে! নিমন্ত্রণ বাড়িতে নির্ঘাৎ চপ-কাটলেট, চিকেন, মটন, বিরিয়ানি প্রভৃতি হরেক রকম মশলাদার খাবারদাবার। এই গরমে এ সবের পরিবর্তে মুখবদল এবং শরীরকে ঠান্ডা করতেই আমাদের আয়োজন।’’
হাত চাটতে চাটতে পাশথেকে এক বৃদ্ধা বলে উঠলেন,‘‘আহা! অমৃত!’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।