গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই পাঁচিল। ছবি: সুব্রত জানা।
দখল হয়ে যাওয়া দামোদরের চর উদ্ধার করল প্রশাসন। ভাঙা পড়ল বেআইনি ভাবে নির্মীয়মাণ পাঁচিল।
হাওড়ার শ্যামপুরের গড়চুমকে ওই চর বেচাকেনায় তৃণমূল নেতা তথা শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দীপক দাস জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পত্রিকায়। এলাকায় প্রতিক্রিয়া হয়। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
শ্যামপুর-২ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে রবিবার চরের ওই পাঁচিল ভাঙা হয়েছে। বিএলএলআরও অনুপম চক্রবর্তী জানান, চর দখল করে পাঁচিল দেওয়ার খবর পেয়ে দফতরের একটি দল পরিদর্শনে গিয়েছিল। তাদের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়, অভিযোগ সত্যি। পাঁচিল গাঁথছিলেন মুসিয়ার রহমান মোল্লা নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে সেটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো রবিবার দুপুরে দফতরের আধিকারিকদের সামনে তিনি ওই পাঁচিল ভেঙে দেন। বিএলএলআরও-র সংযোজন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এর পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নিতে বলবেন, তাই করা হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চরটি দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় মণ্ডল পরিবারের দখলে ছিল। কয়েক মাস আগে তাঁরা দীপককে সেটি বিক্রি করেন। দীপক তা বিক্রি করেন স্থানীয় ইটভাটা মালিক মুসিয়ারকে। মাটি ফেলে পাঁচিল তোলার কাজ শুরু হয়। সমাজমাধ্যমে ওই ছবি ছড়াতেই শোরগোল পড়ে। এর আগে মণ্ডল পরিবারের তরফে জানানো হয়, তাঁরা ওই চর দীপককে বিক্রি করে দিয়েছেন। মুসিয়ার জানিয়েছিলেন, তিনি দীপকের থেকে চরটি কিনেছেন। যদিও ওই চর কেনাবেচায় তাঁর যোগ নেই বলে দীপক দাবি করেন আগে। সোমবার চেষ্টা করেও দীপক বা মুসিয়ারের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দু’জনের কেউই ফোন ধরেননি। জবাব দেননি হোয়াটসঅ্যাপের। নদ-নদীর চর দখল নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মীরা। সঙ্গীতা গিরি নামে এক পরিবেশকর্মী বলেন, ‘‘গঙ্গা বা হুগলি নদী, দামোদর ও রূপনারায়ণ নদ দিয়ে শ্যামপুর ঘেরা। কিছু লোকের কুনজর পড়েছে চরের দিকে। যত্রতত্র নদ-নদী থেকে মাটি কাটা, বালি তোলা হচ্ছে। চর দখল করে ইটভাটা, রেস্তরাঁ, লজ তৈরি হচ্ছে। এতে নদীর গতিপথ হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘দামোদরের চর দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে প্রশাসনের আরও নজরদারি দরকার। যে সমস্ত জায়গায় চরে বেআইনি নির্মাণ
হয়েছে, সেগুলি অবিলম্বে ভেঙে দেওয়া দরকার।’’ বিএলএলআরও জানান, অবৈধ বা বেআইনি
দখলের অভিযোগ পেলে প্রশাসনের তরফে তৎপরতার সঙ্গে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।