খেয়োখেয়ি: সংখ্যা বাড়ছে পথকুকুরের। বাড়ছে জমি বাঁচানোর লড়াই। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
হাওড়া শহরে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে পথকুকুর। যে কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অসহায় জীবগুলির প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের ঘটনা। পথকুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণের অব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন হাওড়া জেলা প্রাণী কল্যাণ পর্ষদের কর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে হাওড়া পুরসভার কাছে অ্যানিমাল বার্থ কন্ট্রোল (এবিসি) কেন্দ্র করতে চেয়েও জায়গা না মেলায় রাস্তার কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। যদিও হাওড়া পুরসভার দাবি, কেন্দ্রের জন্য দু’টি জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রাণী কল্যাণ পর্ষদ সেখানে করতে চায়নি।
হাওড়া শহরের সরকারি দফতর, হাসপাতাল চত্বর, বড় রাস্তা কিংবা অলিগলি— সর্বত্র পথকুকুরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। রাত গভীর হলেই দলে দলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে তারা। ফলে রাতে পথে বেরোনো এখন আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের কাছে। কারণ বহু ক্ষেত্রে পথচলতি মানুষকে আঁচড়ে বা কামড়ে দিচ্ছে পথকুকুরের দল।
যার প্রমাণ সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বছর কয়েকের ব্যবধানে এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘হাওড়া জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০ জন করে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক নিতে আসছেন। সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত প্রতিষেধকের জোগান থাকায় বেশির ভাগ মানুষ এখানেই আসেন।’’
হাওড়া শহরে পথকুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির এই সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের চিকিৎসক উৎপল সিংহও। তাঁর দাবি, ‘‘এর অন্যতম কারণ যথাযথ পরিকাঠামোর অভাব। পথকুকুরের জন্য হাওড়ায় যেমন কোনও এবিসি সেন্টার নেই, তেমনই কুকুর ধরার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলও নেই। হাওড়া পুরসভাকে বার বার এই বিষয়টা জানালেও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।’’
উৎপল জানান, প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগ থেকে প্রতি বছর নিয়ম করে প্রাণী কল্যাণ পক্ষ পালিত হয়। ট্যাবলো সহযোগে মিছিল করে তখন সচেতনতার অনুষ্ঠান করা হয়। যাতে পথকুকুরের মতো প্রাণীদের উপরে মানুষের নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধ করা যায়। প্রাণীর উপরে অত্যাচার বন্ধের জন্য নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। সে সব নিয়েও প্রচার করা হয়। তা সত্ত্বেও রাস্তার কুকুররকে পিটিয়ে মারা বা অত্যাচার করার মতো ঘটনা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে।
এ সব বন্ধ করতে তাই হাওড়া পুর এলাকায় এবিসি কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্তারাও। কুকুর ধরার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল পুরসভায় না থাকার কথা মেনে নিয়ে হাওড়ার পুর প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সঙ্গে এবিসি কেন্দ্রের বিষয়ে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। আমরা দু’টি জায়গা ওঁদের দেখিয়েছিলাম। কিন্তু ওই
দফতরের কর্তাদের সেগুলি পছন্দ হয়নি। ওঁরা যদি মনে করেন, আমরা অস্থায়ী এবিসি শিবির করতে পারি। প্রস্তাব দিলে সেই ব্যবস্থাও করা হবে।’’