চাঁপদানির ইন্দিরা ময়দান ঘাটে ছটপুজোয় উপচে পড়া ভিড়। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
ছটপুজোতেও উবে গেল সচেতনতা। বুধবার বিকেলে একসঙ্গে বহু মানুষ ভিড় করলেন হাওড়া এবং হুগলি জেলার গঙ্গার ঘাটগুলিতে। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে মাস্ক ছাড়াই উৎসবে শামিল হলেন অনেকে। তবে, ডিজে বা শব্দবাজির তাণ্ডব সে ভাবে ছিল না। ফলে, দূষণ অনেকটা এড়ানো গিয়েছে বলে পরিবেশকর্মীরা মনে করছেন। তবে, আজ, বৃহস্পতিবারেও বাতাস বাজির দূষণ থেকে মুক্ত থাকে কি না, সে প্রশ্ন থাকছেই।
হাওড়ার সাঁকরাইল, বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল, উলুবেড়িয়ায় গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে ভিড় হয়েছিল ভালই। দূরত্ববিধি মানার বালাই ছিল না বললেই চলে। অনেকেই মাস্ক পরেননি। তবে, শব্দবাজি বা ডিজে-র তাণ্ডব অন্যান্য বছরের তুলনায় কম ছিল। পুলিশ ও পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়, দূরত্ববিধি মানা এবং মাস্ক পরার জন্য বারবার প্রচার চালানো হয়েছে। বেশিরভাগ পুণ্যার্থী দূরত্ববিধি বজায় রেখেছেন বলে তাদের দাবি। প্রতি ঘাটেই প্রশাসনের তরফে আলোর ব্যবস্থা হয়।
সাঁকরাইলে ঘাটে সিসিক্যামেরা লাগিয়ে পুলিশ নজরদারি চালায়। বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল, উলুবেড়িয়ায় পুরকর্তারা ঘাটে হাজির ছিলেন।
বিকেলে হুগলির চাঁপদানিতে ইন্দিরা ময়দান লাগোয়া গঙ্গার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, উপচে পড়া ভিড়। দূরত্ববিধি লাটে। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। অথচ, প্রশাসন নীরব। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মাইকে প্রচার করেছে। কিন্তু লোকজন সচেতন হননি। ছটপুজোর জন্য এ দিন চাঁপদানিতে জিটি রোডে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বৈদ্যবাটীতেও প্রতি ঘাটেই পুলিশের সামনেই করোনা বিধি লঙ্ঘন করতে দেখা যায় গঙ্গায় পুজো দিতে আসা লোকজনকে। ঘাটে ঢোকার আগে পুরসভার তরফে তাদের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়। কিন্তু বহু লোকই মাস্ক পরার ধার ধারেননি। এই ছবি আরও অনেক জায়গাতেই দেখা গিয়েছে।
তবে, কোভিড বিধি বজায় রেখে ছটপুজোর সূচনা হয়েছে আরামবাগে। পুরসভা থেকে দ্বারকেশ্বর নদের চারটি ঘাট পরিষ্কার এবং স্যানিটাইজ় করা হয়েছিল। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, মহিলাদের পোশাক বদলানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উদ্ধারকারী দল মজুত রাখা হয়। শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েকটি বাজির আওয়াজ শোনা গিয়েছে। উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুরের ঘাটগুলিতেও ভিড় হয়েছিল। মাস্ক পরা এবং বাজি না পোড়ানোর জন্য পুলিশ মাইকে প্রচার করে উত্তরপাড়া, কোন্নগরে। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফেও কোন্নগরে এ ব্যাপারে প্রচার চালানো হয়। পুরসভার একাধিক কো-অর্ডিনেটরও তাতে শামিল হন।
সচেতনতার অন্য ছবি দেখা গিয়েছে উত্তরপাড়ার মাখলার সারদাপল্লিতে। করোনা পরিস্থিতিতে গঙ্গায় ভিড় এড়াতে এখানে একটি আবাসনের ছাদে তৈরি করা হয়েছিল কৃত্রিম জলাশয়। ওই আবাসন এবং আশপাশের লোকজনও এখানে এসে পুজো দেন। ওই উদ্যেগের অন্যতম উদ্যেক্তা পঙ্কজ রায় জানান, ছাদের কিছুটা জায়গা ঘিরে সেখানে গঙ্গার জল ঢেলে জলাশয় তৈরি করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এতে প্রথা মেনে উৎসব পালন করা গেল। আবার করোনা সংক্রমণ রুখতে ভিড়ও এড়ানো গেল।’’ এমন বিকল্প ভাবনায় স্থানীয়েরা খুশি।