বাগনানের বৈদ্যনাথপুর হাই স্কুলে প্রায় ফাঁকা শিবির। নিজস্ব চিত্র।
‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবির চলছে। অথচ, ভিড় নেই!
শিবিরের প্রবেশদ্বারে পুলিশ। স্যানিটাইজ়ার চ্যানেল। আগত প্রায় সকলের মুখে মাস্ক। কারও না থাকলে তা দেওয়া হচ্ছে। বজায় রয়েছে দূরত্ব-বিধি। মাইকে প্রচার করছেন স্বয়ং বিডিও, ‘মাস্ক না পরে কেউ শিবিরে আসবেন না’।
বৃহস্পতিবার ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে এমনই ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল বাগনান-২ ব্লকের বাঁটুল-বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতের বৈদ্যনাথপুর হাই স্কুলের শিবিরে। ভিড়ের চোটে হাওড়া জেলায় প্রায় সর্বত্রই শিবিরগুলিতে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। চৌপাট হয়ে গিয়েছে কোভিড বিধি। অথচ, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে যে ভিড় এড়িয়ে, কোভিড বিধি মেনেও শিবির চালানো যায়, তা করে দেখাল বাঁটুল-বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েত।
তবে, শুধু ওই পঞ্চায়েতই নয়, বিডিও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এখানকার ৮টি পঞ্চায়েতের প্রতিটিতেই শিবিরের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। তারই সুফল মিলছে। তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের চাপই সবচেয়ে বেশি, তাই আমরা এই দু’টি প্রকল্পের কথা মাথায় রেখেই শিবিরের যথাসম্ভব বেশি বিকেন্দ্রীকরণ করেছি।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, বাঁটুল-বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতে ১৬টি সংসদ আছে। ১৬ অগস্ট, এই পর্বের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি শুরুর দিন থেকেই সংসদভিত্তিক মিনি শিবির চালু করে দেওয়া হয় মূলত লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য। প্রতিদিন একটি করে সংসদ বেছে নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্ঘভবনে চলছে ওই দুই প্রকল্পের আবেদনপত্র জমা নেওয়া এবং তা কম্পিউটারে নথিভুক্ত করার কাজ।
সাতটি গ্রাম সংসদকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈদ্যনাথপুর হাইস্কুলে হল মূল শিবির। যেহেতু লক্ষ্ণীর ভান্ডার এবং স্বাস্থ্যসাথীর মতো জনপ্রিয় প্রকল্পগুলির জন্য মিনি শিবিরে্ বহু মহিলা আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন, তাই মূল শিবিরে বেশি ভিড় হয়নি। কোন সাতটি গ্রাম সংসদের মানুষজন মূল শিবিরে আসবেন, সেটা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আগেই প্রচার করা হয়। ফলে, বাকি সংসদ এলাকার মানুষজন আর এ দিনের শিবিরে অযথা ভিড় করেননি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, আরও দু’টি মূল শিবির হবে। তাতে বাকি ৯টি সংসদ এলাকার মানুষজনকে ভাগ করে ডাকা হবে। একইসঙ্গে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন মিনি শিবিরও চলবে। সব মিলিয়ে ব্লকে মোট ১৪৪টি শিবির করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিডিও বলেন, ‘‘আমাদের হিসেবে শুধু লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পেই ব্লকে ৫৫ হাজার সম্ভাব্য উপভোক্তা আছেন। ফলে, শিবিরের বিকেন্দ্রীকরণ করা না হলে পরিস্থিতি যে আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, সেটা আশঙ্কা করেছিলাম। সেই কারণেই প্রতিটি পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা করে এই পরিকল্পনা।’’
সুষ্ঠু ভাবে শিবির করতে সক্রিয় ছিল পঞ্চায়েতও। প্রধান প্রিয়জিৎ নন্দী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আমরাই স্যানিটাইজ়ার চ্যানেল স্কুলের প্রবেশদ্বারে বসিয়েছি। দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরার ব্যাপারে নজর রেখেছি। কোভিড যাতে না ছড়ায় সেটা আমরা সুনিশ্চিত করতে চেয়েছি।’’