Sreerampore

Medical Student: পাশে স্কুল, ডাক্তারি পড়তে পটনা গেল আদিত্য

পূর্বতন প্রধান শিক্ষক সমীরণ লাহা কিছু দিন আগে অবসর নিয়েছেন। আদিত্য জানায়, সমীরণবাবু তাকে বিনা বেতনে রসায়ন পড়িয়েছেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৮
Share:

স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আদিত্য। নিজস্ব চিত্র।

গৃহশিক্ষকের কাছে বা কোচিং সেন্টারে প্রস্তুতি নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। ভরসা ছিল ইউটিউব। সেই প্রস্তুতি আর জেদকে সম্বল করেই ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা অর্জন করল ডানকুনির মোল্লাবেড়ের আদিত্য ধাড়া। প্রবেশিকা পরীক্ষায় (নিট) পাশ করে সে পটনা এমস-এ ভর্তি হয়েছে। আদিত্য জানায়, গৃহশিক্ষক না থাকার অপূর্ণতা পূরণ করেছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। সাফল্যের কৃতিত্ব তাঁদেরই দিতে চায় সে।

Advertisement

পঞ্চম শ্রেণি থেকেই আদিত্য পড়ত শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। অভাবী পরিবার। বাবা গৌতম ধাড়া ডানকুনিতে দিল্লি রোডের ধারে একটি কারখানায় কাজ করতেন। ২০১৯ সালে আদিত্যর মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর দিন কয়েক পরে তিনি মারা যান। পরিবারটি কার্যত অথৈ জলে পড়ে। মা মিঠুদেবী বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করেন। দাদা তন্ময়ের রোজগারও বেশি নয়। তাতে অবশ্য আদিত্যের পড়া আটকায়নি। ওই স্কুলেই সে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়।

পূর্বতন প্রধান শিক্ষক সমীরণ লাহা কিছু দিন আগে অবসর নিয়েছেন। আদিত্য জানায়, সমীরণবাবু তাকে বিনা বেতনে রসায়ন পড়িয়েছেন। পলাশ ঘোষ নামে আর এক শিক্ষক অঙ্ক দেখিয়েছেন বিনা বেতনে। পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যা সে একাই পড়েছে। তবে, এ ক্ষেত্রেও স্কুলের শিক্ষকদের যথেষ্ট সাহায্য সে পেয়েছে। বেতনও মকুব করেছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। করোনা পর্বে স্কুল বন্ধ থাকায় নির্ভর করতে হয়েছে অনলাইনের উপরে। ২০২১ সালে সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ৪৬১ নম্বর পেয়ে। ইউটিউব ঘেঁটে চলে ‘নিট’-এর প্রস্তুতি।

Advertisement

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়। দিন কয়েক আগে পটনা এমস থেকে ডাক আসে। সাড়ে পাঁচ বছরের কোর্স। স্কুলের তরফে দ্রুত ট্রেনের রিজ়ার্ভেশনের ব্যবস্থা করা হয়। শুক্রবারের ট্রেনে পটনা যায় সে। যাওয়ার আগে প্রিয় ছাত্রকে স্কুলে ডেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক সুবোধ লোধ জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকারা আদিত্যের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। সঙ্গে ভবিষ্যতে সহযোগিতার আশ্বাস।

দারিদ্রকে হারিয়ে আদিত্যের সাফল্য নিয়ে প্রধান শিক্ষকের উচ্ছ্বাস, ‘‘তথাকথিত ব্যয়বহুল এলিট কোচিং সেন্টারে না পড়েও পরিশ্রম এবং হার না-মানা মানসিকতা থাকলে যে অনেক দূর এগোনো যায়, আদিত্য তার প্রমাণ। এ বার সে ডাক্তার হবে। আমাদের আরও গর্বিত হওয়ার পালা তখন।’’ একই বক্তব্য সমীরণবাবুরও। তাঁর সংযোজন, ‘‘গোড়া থেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওর পাশে ছিল। আজও আছে। ডাক্তার হওয়া ওর স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সফল করার লক্ষ্যে একটা বড় ধাপ পেরোলো। বাকিটাও নিশ্চয়ই পারবে।’’

আদিত্যের কথায়, ‘‘আমি যে এতদূর পৌঁছেছি, তার পিছনে স্যার-ম্যাডামদের ভূমিকা অনেক। শুধু পড়ায় সাহায্য করাই নয়, ওঁরা মানসিক ভাবেও আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন। ডাক্তার হয়ে ওঁদের মর্যাদা রাখব।’’ লাজুক ছেলের গলায় প্রত্যয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement