‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে করোনা-বিধি শিকেয় তুলে জনতার ঢল। বুধবার পুরশুড়ার আঁকড়ি শ্রীরামপুর এলাকায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
প্রথম তিন দিনেই হুগলিতে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে প্রায় দেড় লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে। বুধবার, তৃতীয় দিনেও ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে ভিড় উপচে পড়ে। সবতেয়ে বেশি ভিড় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ কাউন্টারেই।
ভিড় সামালাতে এ দিন বেশি সংখ্যক পুলিশ, বিশেষত মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। কোথাও শিবিরের পাশের মাঠে লোকজনকে দাঁড় করানো হয়। তাতেও করোনা-বিধি শিকেয় ওঠে। শারীরিক দূরত্ব বিধি রক্ষা করা যায়নি। বহু লোকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। কর্মীদের মাস্ক নাকের নীচে ঝুলতে দেখা গিয়েছে। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এত মানুষ শিবিরে আসবেন, ভাবা যায়নি। পরিস্থিতি বুঝে শিবিরের সংখ্যা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এক মাসে ৯০৭টি শিবির করা হবে বলে ঠিক ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য সেই সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি বাড়িয়ে ১৪২৭টি করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘‘করোনা-বিধির জন্য ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পঞ্চায়েতের সংসদ স্তর পর্যন্ত শিবির করা হবে।’’
এত দিন করোনার টিকাকরণের জন্য মাঝরাত থেকে লাইন পড়ছিল। এ বার একই দৃশ্য ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরেও। ছাতা-জলের বোতল হাতে মহিলাদের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে দরখাস্ত জমা দেওয়ার হিড়িক চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের মগরা-১ পঞ্চায়েতের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। এখানে এই প্রকল্পে প্রথম দিন ১৪৩১টি দরখাস্ত জমা পড়েছে। এই সংখ্যা ওই পঞ্চায়েতের মহিলাদের মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বৈদ্যবাটী পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কল্পনা চক্রবর্তী ও অনামিকা দাস শেওড়াফুলি সুরেন্দ্রনাথ বিদ্যানিকেতনে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা জানান, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে আবেদন করতে মঙ্গলবার রাত ২টো নাগাদ স্কুলের সামনে এসে দেখেন, লাইন পড়ে গিয়েছে। স্কুল চত্বরে ভিড় এড়াতে এখানে প্রশাসনের তরফে পাশের রাজবাড়ি মাঠে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। বলাগড় ব্লকের হোয়েরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোর পাঁচটা নাগাদ লাইন দেন জনৈক স্বপন দাস। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী এবং লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদনপত্র জমা দিতে বেলা ২টো বেজে গিয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, আবেদনকারীদের অধিকাংশেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যাঁদের নেই, তাঁদের অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা শিবিরে থাকছেন। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে নির্দেশ ছিল, লক্ষ্মীর ভান্ডারে ব্যাঙ্কের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট কার্যকরী হবে না। সম্প্রতি অর্থ দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পুরো বিষয়টিকে সহজতর করতে উপভোক্তার জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থাকলেও চলবে।’’ তিন দিনে জেলায় হাজারের বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট
খোলা হয়েছে।
রাজ্যের কোষাগারের টানাটানি অবস্থায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সরকারি আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, প্রকল্পের টাকা জোগানো নিয়ে অর্থ দফতরের নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট ভাবনাচিন্তা রয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এতটা ভিড় চিন্তার মধ্যে ছিল না, এটা ঠিক। সব সুষ্ঠু ভাবে করার চেষ্টা চলছে। টাকা জোগানোর বিষয়টি নিশ্চয়ই সরকারের মাথায় রয়েছে। এটা আমাদের ভাবার বিষয় নয়।’’