জাতীয় পরিবেশ আদালত। —ফাইল চিত্র।
রাস্তার পাশে নালা, ডাস্টবিন, এমনকি, গঙ্গাতেও পোষ্য ও রাস্তার কুকুর, বেড়ালের দেহ ছুড়ে ফেলা হয়। যা সাফাইকর্মীরাও সাফ করেন না। পোষ্য বা রাস্তার কুকুর, বেড়ালের দেহ সৎকারের জন্য হাওড়া পুরসভার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই মর্মেই মামলা দায়ের হয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতে। এর উত্তরে হলফনামা দিয়ে হাওড়া পুরসভা জানিয়েছিল, শিবপুর শ্মশানের পাশের জমিতে মৃত প্রাণীদের সৎকারের জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। দু’পক্ষের মতামত শুনে পুজোর মধ্যেই এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য রায় দিল আদালত।
গত বুধবারের সংশ্লিষ্ট রায়ে আদালত হাওড়া পুরসভাকে দ্রুত ওই বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আদালত এটাও জানিয়েছে, রাস্তার কুকুর, বেড়াল বাদ দিয়ে পোষ্যদের সৎকারের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের মালিকই। যদি কেউ পোষ্যকে কবর দিতে চান, তা হলে তাঁকে সেই স্বাধীনতা দিতে হবে। একই ভাবে কেউ যদি পোষ্যকে দাহ করতে চান, তা হলে সেই আর্জিও হাওড়া পুর কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে কুকুর, বেড়াল এবং পোষ্যদের মৃতদেহ যত্রতত্র ছুড়ে ফেলা নিয়ে মামলাটি করেছিলেন পশুপ্রেমী শৈলেশ উপাধ্যায়। তিনি তাঁর আবেদনে জানিয়েছিলেন, মৃত পশুর দেহ দাহ বা সৎকারের কোনও পরিকাঠামোই হাওড়া পুরসভার নেই। তার ফলে পশুদের মৃতদেহের কারণে সংলগ্ন এলাকা তো বটেই, এমনকি, গঙ্গাও দূষিত হয়ে চলেছে ক্রমশ। এর জবাবে হাওড়া পুরসভা পশুদের মৃতদেহ দাহ বা সৎকারের উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার কথা স্বীকার করে নেয় নিজেদের হলফনামায়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে বহু আগেই পুরসভাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেএমডিএ চিঠি দিয়ে মৃত পশুদের সৎকারের জন্য দক্ষিণ দমদমের প্রমোদনগরে যে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন এবং পশুপ্রেমী সংগঠনের মধ্যে একাধিক বৈঠকও হয়। তবে সেখানেও সমাধানসূত্র মেলেনি।
তার পরেই পুরসভার তরফে আদালতকে জানানো হয়, শিবপুর শ্মশানের পাশেই বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পোষ্যকে কবর দেওয়ার জন্য জমিও চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। যত ক্ষণ না এই কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে, তত ক্ষণ ওই এলাকাতেই আর একটি জমিতে পশুদের সৎকারের ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নিয়ম মেনে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়ারও প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এর পাশাপাশি, প্রমোদনগরের সরকারি ব্যবস্থার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার কাজ চালানো হবে বলেও পুরসভা জানিয়েছে। হাওড়া পুরসভার আইনজীবী অমৃতা পাণ্ডে এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে দ্রুত প্রকল্প সম্পূর্ণ করা হবে।’’