ত্রিপলে ঘেরা কুঁড়েঘরের সামনে রবিনের স্ত্রী পাপিয়া। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় এক বছর ধরে ত্রিপল ঘেরা কুঁড়ে ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বাগনান-২ ব্লকের আন্টিলা পঞ্চায়েতের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা রবিন পান্ডে। আবাস প্লাসে বাড়ি তৈরির জন্য তাঁর নাম চূড়ান্ত তালিকায় আছে। কিন্তু টাকা পাননি। এ দিকে, টাকা না পেলেও বাড়ি ভেঙে ফেলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার নাম চূড়ান্ত তালিকায় নির্বাচিত হওয়ার পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়িটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়। আমি টালির চাল খুলে ফেলি। ছিটেবেড়ার দেওয়াল ভেঙে ফেলি। কিন্তু বাড়ির টাকা আর আসেনি।’’
শুধু রবিন নয়, এই পঞ্চায়েতের শুধু আন্টিলা উত্তর এবং দক্ষিণপাড়া মিলিয়েই ১৮ জন উপভোক্তা বাড়ি ভেঙে ফেলেছেন। ত্রিপল টাঙানো কুঁড়েঘরে কোনওমতে বসবাস করছেন।
মেচেদায় একটি ছোট চায়ের দোকান চালান রবিন। স্ত্রী এবং অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে সংসার। আগে থাকতেন টালির চাল দেওয়া ছিটেবেড়ার ঘরে। বাড়ির টাকা না আসায় শেষ পর্যন্ত গাঁটের কড়ি খরচ করে কাঠামোর উপরে টিন চাপিয়েছেন। ছিটেবেড়ার দেওয়াল ঢেকেছেন প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়ে। রবিন বলেন, ‘‘সরকারি টাকা তো পেলামই না, উল্টে টিন আর ত্রিপল বাবদ খরচ হয়ে গেল প্রায় ১৫ হাজার টাকা।’’
বাগনান-২ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, এখানে ৭০৯ জন উপভোক্তার নাম বাড়ি তৈরির চূড়ান্ত তালিকায় আছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রিয়জিৎ নন্দী বলেন, ‘‘যাঁদের নাম চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই টাকা পাওয়ার আশায় পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলেছেন। তাঁরা আমাদের কাছে প্রশ্ন করছেন, কবে টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের কাছেও উত্তর নেই।’’
এই এলাকা থেকে নির্বাচিত বাগনান-২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘কেন্দ্র টাকা দিল না। অথচ, যাঁদের বাড়ি ভাঙা হল, তাঁরা দোষ দিচ্ছেন আমাদের। তাঁদের বক্তব্য, কেন আমরা বাড়ি ভাঙতে বললাম।’’
১৩-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাগনান-২ ব্লকে পরিদর্শনে আসার কথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের পরিদর্শক দলের। তাঁরা একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা প্রকল্পের হাল খতিয়ে দেখবেন। এই পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৭ পঞ্চায়েতেই এখন তৎপরতা তুঙ্গে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় পরিদর্শকদের সঙ্গে আবাস প্লাসের উপভোক্তাদের কথা বলানো হবে। প্রিয়জিৎ বলেন, ‘‘আমরা চাই, কেন্দ্রীয় পরিদর্শকেরা বঞ্চিত উপভোক্তাদের হাল নিজের চোখে দেখুন।’’
কেন্দ্রীয় পরিদর্শকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুখিয়ে আছেন উপভোক্তারাও। রবিনের স্ত্রী পাপিয়া বলেন, ‘‘ওঁদের কাছে জানতে চাইব, কোন অপরাধে আমাদের মতো গরিব মানুষকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও বঞ্চিত করা হল?’’
হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় আবাস প্লাসের চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় কুড়ি হাজার উপভোক্তার নাম আছে। এক কর্তা জানান, উপভোক্তাদের সব তথ্য কেন্দ্রীয় পরিদর্শকদের কাছে পেশ করতে তাঁরা প্রস্তুত। তৃণমূল নেতা তথা পূর্ত এবং জনস্বাস্থ্যমন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘আবাস প্লাস প্রকল্পে সরাসরি উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা আসে। এখানে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। এই প্রকল্পে রাজ্য ৪০ শতাংশ টাকা দেয়। কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ টাকা। রাজ্য টাকা নিয়ে প্রস্তুত আছে। কেন্দ্র টাকা ছাড়লেই রাজ্য তার অংশ দিয়ে দেবে। গরিব মানুষকে বঞ্চিত করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার টাকা দিচ্ছে না।’’
বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণউদয় পাল চৌধুরী বলেন, ‘‘আবাস যোজনা প্রকল্পে আগে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে তার হিসাব রাজ্য দেয়নি। হিসাব দিলেই টাকা এসে যাবে।’’ কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ মিটিয়ে অবিলম্বে এই প্রকল্পে টাকা দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে জেলা সিপিএম।