কার্যালয়ে প্রবীর ঘোষাল। ছবি: তাপস ঘোষ
বিধানসভা নির্বাচনের আগে সোমবার পুরশুড়ায় হুগলি জেলায় প্রথম জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ, সেখানে দেখা গেল না এই জেলারই উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষালকে। যার জেরে তাঁকে নিয়ে ফের নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় খানাকুলের বিধায়ক ইকবাল আহমেদ এবং প্রবীর ঘোষাল ছাড়া জেলার সব তৃণমূল বিধায়কই হাজির ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সকলেরই নাম করেন। ইকবাল অসুস্থ, এ কথাও জানাতে ভোলেননি মমতা। কিন্তু একবারের জন্যেও তৃণমূল নেত্রীর মুখে প্রবীরের নাম শোনা যায়নি।
অবশ্য বেশ কিছু দিন ধরেই ‘বেসুরো’ উত্তরপাড়ার বিধায়ক। তিনি জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র এবং কোর কমিটির সদস্যও। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও দলনেত্রীর সভায় গরহাজিরা নিয়ে এ দিন প্রবীর মুখ খোলেননি। তবে, দলের কাজকর্ম নিয়ে যে তাঁর অভিমান রয়েছে, তা-ও অস্বীকার করেননি। তিনি জানিয়েছেন, যা বলার, আজ, মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলবেন। সোমবার সকালে আধ ঘণ্টা বাড়ি সংলগ্ন নিজের কার্যালয়ে ছিলেন প্রবীর। তারপরে কলকাতায় চলে যান।
প্রবীরের গরহাজিরাকে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছেন না। জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘ওঁর কী নিয়ে অভিমান, আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’’ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘প্রবীরদা না এলে আমি কী করব! তাঁর হয়তো বিধায়ক থাকা হয়ে গিয়েছে। যা দরকার ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেয়ে গিয়েছেন। নতুন কিছু দরকার নেই বলে হয়তো আসছেন না।’’ শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষ ভোট দিয়ে বিধায়ক তৈরি করেন। কে এলেন না, তা সংবাদপত্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আমাদের কাছে গুরুত্বহীন।’’
গত লোকসভা ভোটে হুগলিতে খারাপ ফল হওয়ায় তৃণমূলের সংগঠনে রদবদল করা হয়। এর পর থেকেই দলীয় নেতৃত্বের কাজকর্ম নিয়ে একাধিক বার উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রবীর। দিন কয়েক আগে কোন্নগরে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে হারানোর জন্য তাঁর বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত বেহাল নৈটি রোড সংস্কার করা হচ্ছে না। রাজ্য সরকারের কাজের পদ্ধতি নিয়েও সমালোচনা করেন প্রবীর। বিজেপি তাদের দলে প্রবীরকে স্বাগত জানিয়েই রেখেছে।
ফলে, এ দিন দলনেত্রীর সভায় প্রবীর না থাকায় তিনি দলবদল করবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনা জোর পায়। খানাকুলেরর বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য শৈলেন সিংহও মমতার সভায় যাননি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দলের সঙ্গে সংস্রব রাখবেন না। তাঁর খেদ, ‘‘এই দলে পুরনো লোকদের অসম্মান আর বঞ্চনা করা হচ্ছে। দল সামলাতে চোর আর তোলাবাজদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুনতে হচ্ছে, আমার মতো একটা-দু’টো শৈলেন চলে গেলে কিছু যায় আসে না!’’
অন্য দলে যাওয়া নিয়ে তিনি ভাবনাচিন্তা করবেন বলে শৈলেন জানান। বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, ‘‘আমরা চাই প্রবীরবাবুর মতো লোকজন আমাদের দলে আসুন। ওঁকে আহ্বান জানাচ্ছি।’’