বেআইনি: হাওড়ার এই খাটালজাত বর্জ্যের জেরেই এলাকায় মূল নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
প্রকৃতপক্ষেই যেন গোদের উপরে বিষফোঁড়া!
একে তো শহরের বুকে বহু বছর ধরেই বিনা বাধায় চলছে একাধিক অবৈধ খাটাল। তার উপরে সেই সমস্ত খাটাল থেকেই দিনের পর দিন বর্জ্য ফেলে পুরোপুরি বুজিয়ে ফেলা হয়েছে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ মূল নিকাশি নালা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই খাটালগুলির ফেলা বর্জ্যে বুজে গিয়েছে রেলের জলাজমির উপরে থাকা একটি ডোবাও। বুজে যাওয়া নিকাশি নালাটি গিয়েছে হাওড়া পুরসভার তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে। দুর্গন্ধে ভরা ওই নালার পাশেই ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক-সহ এলাকার যাবতীয় বর্জ্য, এমনকি, জীবজন্তুর মৃতদেহও। তারই পাশে চলছে দু’-দু’টি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের হিন্দি স্কুল। এটাই হল হাওড়া পুরসভার সালকিয়ার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের শশিভূষণ সরকার লেনের চিত্র। যেন হাওড়া পুর এলাকার দ্বিতীয় বেলগাছিয়া ভাগাড়।
অভিযোগ, ওই এলাকায় প্রতি বছরই বর্ষার সময়ে বাসিন্দাদের বাড়িতে নোংরা, পচা জল জমে থাকে। মহিলা থেকে শিশু, সকলকেই সেই জল পেরিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় বুজিয়ে ফেলা নিকাশি নালার উপর দিয়ে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় চার ফুট চওড়া ও আট ফুট গভীর ওই নালায় দিনের পর দিন খাটালের এবং আশপাশের এলাকার বর্জ্য পড়ায় সেটি প্রায় বুজে গিয়েছে। সেই বুজে যাওয়া নর্দমার পাড়েই এখনও নিত্যদিন ফেলা হচ্ছে শহরের আরও অন্যান্য আবর্জনা।
গোটা এলাকা ভরে গিয়েছে বহুতল বাড়িতে। তা সত্ত্বেও দেশের সব থেকে নোংরা শহরের তকমা পাওয়া হাওড়ার ওই ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকার হাল নিয়ে হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষার আগে হাওড়া পুরসভা ওই নিকাশি নালা থেকে উপরের কিছু আবর্জনা তুলে নিয়ে গিয়ে দায় সারে। যার ফলে বর্ষায় কোমরজলে ডুবে থাকতে হয় তাঁদের। স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দাস বললেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই রেলের জমিতে এই খাটাল চলছে। খাটালের সমস্ত বর্জ্য পড়ে একটি ডোবা বুজে গিয়েছে। এখানকার মূল নিকাশি নালাটির অবস্থা দেখুন। সেটা গোবরে পুরো বুজে গিয়েছে। আমরা পুরসভাকে বার বার বললেও খাটাল উচ্ছেদের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
একটি বহুতলের বাসিন্দা সরিতা সিংহ বলেন, ‘‘প্রতি বর্ষায় আমাদের আবাসনে নর্দমার পচা জল দাঁড়িয়ে থাকে দিনের পর দিন। পুরসভার সাফাই দফতর থেকে বর্ষার আগে এসে এক বার করে নর্দমার উপরের আবর্জনা পরিষ্কার করে চলে যায়। ভুগতে হয় আমাদের।’’ শুধু শশিভূষণ সরকার লেন নয়, ওই নালাটি যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভৈরব দত্ত লেন থেকে এসে নন্দীবাগান হয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের বেনারস রোডে মিশেছে, সেই গোটা এলাকার একই চিত্র। খোলা নর্দমার পুরোটাই ভরে রয়েছে নানা বর্জ্যে। আর নর্দমার আশপাশ হয়ে গিয়েছে ভাগাড়।
কিন্তু একটি শহরের বুকে এতগুলি খাটাল থাকে কী করে, যেখানে শহরে খাটাল সম্পূর্ণ বেআইনি?
হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই খাটালগুলির ফেলা বর্জ্যের জন্যই এলাকার মূল নিকাশি নালার এমন হাল হয়েছে। আমরা রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে সমস্ত জানিয়ে খাটাল উচ্ছেদের ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছি। কারণ, পুরসভা একা
ওই খাটাল উচ্ছেদ করতে পারবে না। বিভিন্ন দফতরের সাহায্য প্রয়োজন। আমরা সাহায্যের অপেক্ষায় আছি।’’